বগুড়ায় গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হত্যাসহ কয়েকটি মামলার আসামি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক আদালতের হাজতে হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দোতলার হাজতখানায় কয়েকজন তার ওপর হামলা চালায়। তিনি দাবি করেন, কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক হোসেনের নির্দেশে তাকে হত্যার জন্য হামলা করা হয়েছে।
জানা গেছে, একটি মামলায় হাজিরা দিতে মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান শফিককে কারাগার থেকে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দোতলায় হাজতখানায় আনা হয়। হাজিরা শেষে তাকে হাজতে আনা হয়। সেখানে কয়েকজন হাজতি ও কয়েদি ছিলেন। বেলা দেড়টার দিকে হাজতের ওয়াশরুমে শফিকের হাতে থাকা পানির বোতল থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি পড়ে হত্যা মামলার আসামি সাগরের গায়ে। এ নিয়ে শফিকের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সাগর, সাব্বির, জলিল ও কালাম ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর শফিকের ওপর হামলা চালায়। তাকে মেঝেতে ফেলে মাথা, কোমর ও হাতে আঘাত করা হয়।
এ সময় হাজতে থাকা পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ও শফিককে অন্যত্র সরিয়ে নেন।
এদিকে আদালত চত্বরে আবু সুফিয়ান শফিক অভিযোগ করেন, কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক হোসেনের নির্দেশে হত্যা মামলার আসামিরা তাকে হত্যার জন্য হামলা চালিয়েছে। ওয়াশরুমে আশ্রয় নিলেও সেখানে মারধর করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে থেকেও নিরাপত্তা পাননি। তিনি আহত হলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে দ্রুত কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, টাকার বিনিময়ে আদালতের হাজতে আসামিদের স্বজনদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদ করায় তার ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে। শফিক এ হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। এখানে মামলা না নিলে প্রয়োজনে তিনি হাইকোর্টে যাবেন। কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক হোসেনকে হুকুমের আসামি করা হবে।
হামলার সময় হাজতখানার সামনে উপস্থিত শফিকের মেয়ে বলেন, কোর্ট ইন্সপেক্টর তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা নেননি। তিনি এ হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
বগুড়ার কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই এ ব্যাপারে তার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘কোর্ট ইন্সপেক্টর তাকে জানিয়েছেন, হাজতের ওয়াশরুমে পানি ছিটানো নিয়ে হাজতিদের মধ্যে বিরোধ হয়। এরপর ওয়াশরুমের বাহিরে এসে হাজতি শফিককে মারধর করা হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে এখানে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেছি কিনা?’
অন্যদিকে আদালতের হাজতে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান শফিকের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, ‘এর আগে বগুড়া কারাগারে শাহাদত আলম ঝুনুসহ পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতার সন্দেহজনক মৃত্যু হয়েছে। এসবের কোন তদন্ত হয়নি। তাই শফিকের ওপর হামলা ও কয়েকজনের মৃত্যুর কারণ আমাদের ভাবায়।’
তারা আরও জানান, ১৭০ দিন পর কারাগার থেকে বেরিয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতা ট্রমায় ভুগছেন। তিনি কারাগারে নানান অবিচারের শিকার হয়েছেন। তারা কারাগার ও হাজতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।