বগুড়া জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ অভিযানে করতোয়া নদীর তীরে সরকারি জমিতে স্থাপিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএসের প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনমিক জোনের ১১টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের বাঘোপাড়া পুন্ড্র ইকোনমিক জোনের ভেতরে থাকা বিসিএলের গ্লাস ফ্যাক্টরিসহ অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, উচ্ছেদের আগে কয়েক দফায় টিএমএসএস কর্তৃপক্ষকে নদীর জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা অবৈধ স্থাপনা না সরালে জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া শহরতলির বাঘোপাড়া, গোকুল, মহিষবাথান, তেলিহারা মিলিয়ে চারটি মৌজায় পুন্ড্র ইকোনমিক জোন গড়ে তুলতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএস। সেইসঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থা করা হয় নদীকেন্দ্রিক। পুন্ড্র ইকোনমিক জোনে স্থাপিত করা হচ্ছে গ্লাস ও টাইলস কারখানা, সিরামিক কারখানা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ভেহিকেল অ্যাসেম্বলিং কারখানা, কুটিরশিল্প, ইলেকট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রি, ফুড প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। সেখানে বিভিন্ন শেড নির্মাণ করা হয়।
নির্মাণ করা স্থাপনার বেশিরভাগ বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী করতোয়া নদীর জায়গায় গড়ে তোলা হয়। টিএমএসএস প্রায় ৩০ একর জমিতে এই কর্মযজ্ঞ করে নির্মাণ করে আসছিল। সম্প্রতি এ নিয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসনসহ জেলা নদীরক্ষা কমিটি, বিভিন্ন দফতরের জেলা আইনশৃঙ্খলার মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে নদীর জায়গা উদ্ধারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে হিসেবে বুধবার দুপুরে করতোয়া নদীর প্রায় ৯৩ শতক জায়গার ওপর নির্মাণ করা ১১টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে বুলডোজার লাগিয়ে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু শাহমা, নাহিয়ান মুনসীফ ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ চন্দ্র সরকার।
টিএমএসএসের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ড. অধ্যাপিকা হোসনে আরা বলেন, বেশ কিছু স্থাপনা আমাদের নিজস্ব জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আমাদের স্থাপনাগুলো বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এতে টিএমএসএসের প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, টিএমএসএস কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মোতাবেক তাদের স্থাপনা উচ্ছেদ না করায় জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। শুধু নদীর সীমানা অংশে অভিযান চালানো হয়েছে। কারও ব্যক্তিগত জমিতে না। করতোয়া নদী রক্ষায় এই অভিযান চলমান থাকবে।
জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরির অবৈধ অংশ নদীর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছিল। টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাস, অক্সিজেন প্লান্ট ও শহীদ মিনারও নদীর জমিতে তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোও ধাপে ধাপে উচ্ছেদ করা হবে। ১৯৯৪ সাল থেকে টিএমএসএস করতোয়া নদীর বিভিন্ন অংশে বর্জ্য ফেলে জমি দখল করতে থাকে। এই নিয়ে কয়েকবার ভূমি জরিপ হয়। তবে আগে কখনও জমি উদ্ধার করা যায়নি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে জরিপে দেখা যায়, টিএমএসএস ১৬ দশমিক ৯৭ একর নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। নদী কমিশনের জরিপেও একই তথ্য উঠে আসে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে টিএমএসএসকে অবৈধ দখল ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু দখল না ছেড়ে তারা আদালতে মামলা করে। একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে শুনানির পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও মামলা খারিজ হলে অভিযান চালানো হয়। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নদীর জমি কাউকে লিজ দেওয়ার অধিকার কারও নেই। নদীর জমি উদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকবে।