জয়পুরহাটে নারী ফুটবল ম্যাচ নিয়ে আলোচনা এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। গতকালের বাধা-ভাঙচুরের পর বাতিল হয়েছে আজ বুধবারের ম্যাচ। পরিস্থিতি সমাধানে সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সমঝোতায় বসেনি কোনও পক্ষই।
জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে বুধবার হওয়ার কথা ছিলে স্বাগতিক জয়পুরহাট ও রংপুরের মধ্যকার নারীদের ফুটবল ম্যাচ। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার মুখে তা হতে পারেনি।
নারীদের ফুটবল ম্যাচ ঠেকাতে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) প্রতিবাদ জানান এলাকার মাদ্রাসাশিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মুসল্লিরা। ভেঙে ফেলেন স্কুল মাঠের নিরাপত্তাবেড়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।
ভাঙচুরের অভিযোগ স্বীকার করলেও মাদ্রাসাশিক্ষকদের দাবি, নারী ফুটবল আয়োজন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেনি আয়োজকরা। তাই অশ্লীলতা রোধে বাধ্য হয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন ‘ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা’।
জয়পুরহাটের বাচ্চা হাজি কওমি মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের শিক্ষক মাওলানা মনিরুল ইসলাম ওবাইদী বলেন, ‘এখানে ছেলেদের খেলাধুলা হতো। তার মধ্যে এক মেয়েকে নিয়ে এসে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা করেছিল এখানে।’
আরেক শিক্ষক বলেন, ‘আমরা গিয়ে বেড়াগুলো ভেঙে টিনগুলো এক জায়গায় ও কাঠগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করে ওখান থেকে চলে এসেছি।’
আয়োজক টি-স্টার ক্লাবের বিরুদ্ধে মিলেছে বাণিজ্যের অভিযোগ। টিন দিয়ে মাঠ ঘেরাও করে গেলো দেড় মাস ধরে প্রতিম্যাচে মাটিতে বসে ৩০ টাকা ও চেয়ারে বসে খেলার দেখার জন্য ৭০ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রি করেছেন তারা। যা নিয়ে ছিল অসন্তোষ।
জয়পুরহাটের নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজক স্কুলশিক্ষক মুন্না হোসেন বলেন, ‘আমাদের মাঠ দেওয়া হয়েছিল ফুটবল খেলার জন্য। কিন্তু টিকিট কেটে তারা খেলাধুলা করবে এটা আমাদের কারোই জানা ছিল না।’
মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় মিলছে স্থানীয়দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একজন এলাকাবাসী বলেন, ‘খেলা বন্ধের জন্য সবাই মাতোয়ারা। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় মেলার নামে অশ্লীল নাচ-গান এগুলো নিয়ে অনেকেই মাতোয়ারা। সেখানে কেউ কোনও পদক্ষেপ নেয় না।’
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক প্রশাসন। প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, ‘যেহেতু এটা সামাজিক বিষয়। খেলাটা তারা যেভাবে চালাচ্ছিল অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেখানে একটা অনুমতির বিষয় থাকে।’
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেখানে স্বাভাবিক আছে। এটা থেকে যদি সমাধান না হয় তাহলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো।’