বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাথরুম থেকে হাতকড়া নিয়ে পলাতক আসামি শাহাদাত হোসেন কলম (৩৪) অবশেষে ধরা পড়েছেন। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টার দিকে আদমদীঘি থানা পুলিশ তাকে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য দুই পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ১৪ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর হাইস্কুল পাড়ার ব্যবসায়ী এমরান হোসেন দোকান বন্ধ করে সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে পৌঁছামাত্র তিন ছিনতাইকারী তার হাতে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়। তার চিৎকারে স্থানীয় জনতা বাঁধন নামে এক ছিনতাইকারীকে আটক করে। এ সময় পিটুনিতে আহত করলে পুলিশ তাকে আটক করে নওগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করে।
ঘটনার সময় অন্য দুজন মোটরসাইকেলে পার্শ্ববর্তী বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি মোবাইল ফোনে আশপাশের লোকজনকে অবহিত করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আদমদীঘির আমইল গ্রামের লোকজন বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ছিনতাইকারী রাজু পালোয়ান ও শাহাদাত হোসেন কলমকে আটক করে। এ সময় তাদের দুজনকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ছিনতাইকারী রাজু পালোয়ানের পায়ের রগ কেটে দেয়। খবর পেয়ে আদমদীঘি থানা পুলিশ দুই ছিনতাইকারীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে। প্রথমে তাদের আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে তাদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ সময় ছিনতাইকারীদের কাছে ধারালো চাকু, ১৯ হাজার টাকা, বিকাশের জন্য ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যাংকের চেক পাওয়া যায়।
রাজু পালোয়ান বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম চৌধুরীপাড়ার মোস্তাকিন পালোয়ানের ছেলে ও শাহাদাত হোসেন কলম একই এলাকার খোকা মিয়ার ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মোস্তাফিজুর রহমান ও অন্যরা জানান, আহত ছিনতাইকারী রাজু ও কলম বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বগুড়া পুলিশ লাইনসের রিজার্ভ পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলাম ও কনস্টেবল জাকিরুল ইসলাম তাদের প্রহরায় ছিলেন। ১৬ জানুয়ারি বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে হাতকড়া পরিহিত আসামি কলম হাসপাতালের বাথরুম থেকে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেছে।
ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, ছিনতাইকারী কলম নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল। গোপনে খবর পেয়ে শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে তাকে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে তাকে বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুমন রঞ্জন সরকার জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশ লাইনসের রিজার্ভ পুলিশের এএসআই মফিজুল ইসলাম ও কনস্টেবল জাকিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া এএসআই মফিজুল ইসলামের দায়িত্বে কোনও অবহেলা আছে কিনা, তা নিরূপণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোস্তফা মঞ্জুরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।