চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় ছুরিকাঘাতে দুজন নিহতের বিষয়টি রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং পেয়ারাবাগানে প্রস্রাব করার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার জেরে ঘটনাটি ঘটেছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত আছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে, মঙ্গলবার রাত থেকে ফেসবুকে দাবি করা হয়, ‘ফেসবুকে জয় বাংলা স্লোগান লেখায় তাদের হত্যা করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘রাজনৈতিক ফায়দা নিতে একটি পক্ষ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। যার কোনও ভিত্তি নেই। যারা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নিহতরা হলেন- উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খোলসী গ্রামের এজাবুল হকের ছেলে মাসুদ রানা (২০) ও চাঁদপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে রায়হান আলী (১৬)। এ ঘটনায় আরও চার জন আহত হয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আরও বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে ১২-১৫ দিন আগে খোলসী গ্রামে আব্দুল খালেকের পেয়ারাবাগানে পলিথিন লাগানোর কাজ করেছেন সালাম ও শাহীন নামের দুই ব্যক্তি। ওই সময়ে একদিন পেয়ারাবাগানে সালামের প্রস্রাব করার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন শাহীন। বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর মধ্যে দুজন আবার কিশোর গ্যাং নেতা। ফলে বিষয়টি নিয়ে দুজনের ক্ষোভ বিরাজ করছিল। মঙ্গলবার রাতে পাশের মল্লিকপুর গ্রামে শহীদ জিয়া স্মৃতি সংঘ আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে আসেন সালাম ও তার সঙ্গীরা। অনুষ্ঠান চলাকালে সালাম ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় শাহীনের। সেখান থেকে ফেরার পথে রাত ১১টার দিকে মল্লিকপুর বাজারে শাহীন ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করেন। সেইসঙ্গে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে গুরুতর আহত হন মো. মাসুদ, রায়হান, মো. সুমন (১৮), রজব আলী (১৪), মো. আরমান (১৬) ও মো. ইমন (১৫)। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে মাসুদ ও রায়হান মারা যান। গুরুতর আহত সুমন ও রজবকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’
এ ঘটনায় আমরা রাজনৈতিক কোনও সংশ্লিষ্টতা পাইনি উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় সাত-আট জন জড়িত বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বিকালে মাসুদ ও রায়হানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।’