X
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২

মায়ের লাশ ডিপ ফ্রিজে, সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ছেলের জামিন

বগুড়া প্রতিনিধি
২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৭আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৭

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বাসায় ঢুকে গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে (৫০) হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া সেই ছেলের (১৯) জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বগুড়ার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শাহজাহান কবীর তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। বিষয়‌টি নি‌শ্চিত করেছেন আসামির আইনজীবী উৎপল কুমার বাগচী।

তি‌নি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশের তদন্ত এবং মূল তিন জন আসামির আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি পর্যালোচনা করে ঘটনায় সম্পৃক্ততা না থাকায় ছেলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।’

ছেলের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার ছেলে জড়িত নয়। জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ পায়নি পুলিশ। হত্যায় জড়িতরা গ্রেফতার এবং আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর গত রবিবার ছেলের জামিন আবেদন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলাটি জজ আদালতে নেওয়া হয়। সেখানের বিচারক জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমি হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

গত ১০ নভেম্বর দুপুরে চারতলা বাড়ির তিনতলার একটি ফ্ল্যাটের ডিপ ফ্রিজ থেকে সালমার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি দুপচাঁচিয়া দারুস সুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের স্ত্রী। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে র‌্যাব পরদিন এই দম্পতির ছোট ছেলেকে আটক করে। পরদিন মঙ্গলবার সালমার বড় ছেলে নাজমুস সাকিব বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। ওই দিনই দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিং করে র‍্যাব-১২-এর বগুড়া ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মো. এহতেশামুল হক খান দাবি করেন, হাতখরচের টাকা না পেয়ে মাকে তার ছেলে হত্যা করে লাশ ফ্রিজে রেখেছিল বলে স্বীকার করেছেন।

ওই দিনই ছেলেকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুপচাঁচিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়। বুধবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হয়। কিন্তু আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকার করায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া সিদ্দিকা তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে হত্যাকাণ্ড নাটকীয় মোড় নেয়। হাতখরচের টাকা না পেয়ে মাকে তার ছেলে হত্যা করে লাশ ফ্রিজে রেখেছিল বলে র‍্যাব যে তথ্য দিয়েছিল, তার উল্টো তথ্য রিমান্ডে দিয়েছেন ছেলে। সেইসঙ্গে র‌্যাবের বিরুদ্ধে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছেন।

সেই সূত্র ধরে হত্যায় জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন- দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের ইসলামপুর উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া সুলতানা হাসি (৪১), গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন (২৮) ও তালুচ বাজার এলাকার নারায়ণ রবিদাসের ছেলে সুমন রবিদাস (৩০)। এর মধ্যে শুক্রবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মে‌হে‌দী হাসানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মোসলেম। বাকি দুজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারাও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে একই রকম তথ্য দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুপচাঁচিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত সিং বলেন, ‘রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন নিহতের ছেলে র‌্যাবের কাছে দেওয়া তথ্য অস্বীকার করে ফাঁসানোর কথা বলেন। তার দেওয়া তথ্য অনুসারে ডিবি ও পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সালমার চুরি হওয়া দুটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উন্মোচন এবং জড়িতদের শনাক্ত করে। বৃহস্পতিবার রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। প্রথমে নিহতের বাড়ির চারতলা থেকে মাবিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উপজেলার চালুচ গ্রাম থেকে মোসলেম উদ্দিন ও সুমন রবিদাসকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে সালমার দুটি মোবাইল, তাদের বাড়ির ইন্টারনেট রাউটার ও ঘরের একটি চাবি উদ্ধার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করলে সালমাকে হত্যার পর লাশ ফ্রিজে রাখার কথা স্বীকার করেন তারা। বিষয়টি ডাকাতি বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ এবং আলমারিতে কুড়াল দিয়ে কোপ দেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। শুক্রবার বিকালে বগুড়া আদালতে তাদের জবাববন্দি রেকর্ড করা হয়।’

মাবিয়ার দেওয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সুব্রত সিং বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে মাবিয়া বলেছেন সাত মাস আগে সালমার বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিষয়টি জেনে যাওয়ায় বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেন সালমা। ভাড়ার পাওনা টাকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ হন মাবিয়া। এর জেরে দুই সহযোগী মোসলেম ও রবিদাসকে নিয়ে সালমাকে হত্যার পর লাশ ফ্রিজে রেখে যান। শুক্রবার বিকালে এ ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ছেলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এজন্য জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।’

/এএম/
সম্পর্কিত
সারা দেশে একদিনে গ্রেফতার ১৬১৭
শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যা মামলায় আরেক আসামির দায় স্বীকার
অপারেশন ডেভিল হান্ট: রূপগঞ্জে যুব মহিলা লীগ নেত্রী গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
সারা দেশে একদিনে গ্রেফতার ১৬১৭
সারা দেশে একদিনে গ্রেফতার ১৬১৭
রাস্তায় নারীদের উত্ত্যক্তের ভিডিও ভাইরাল, অভিযুক্ত দুজন আটক
রাস্তায় নারীদের উত্ত্যক্তের ভিডিও ভাইরাল, অভিযুক্ত দুজন আটক
ডা. জাহাঙ্গীর কবির-তাসনিম জারার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নোটিশ
ডা. জাহাঙ্গীর কবির-তাসনিম জারার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নোটিশ
বোট ক্লাবের অনিয়ম নিয়ে বর্তমান সভাপতির বক্তব্যের প্রতিবাদ সাবেক সেক্রেটারির
বোট ক্লাবের অনিয়ম নিয়ে বর্তমান সভাপতির বক্তব্যের প্রতিবাদ সাবেক সেক্রেটারির
সর্বাধিক পঠিত
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো
প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে লাভ ১২ টাকা?
প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে লাভ ১২ টাকা?
ক্যামেরায় ধরা পড়লো শিবির নেতা হত্যা মামলার আসামিকে গুলি ও কোপানোর দৃশ্য
ক্যামেরায় ধরা পড়লো শিবির নেতা হত্যা মামলার আসামিকে গুলি ও কোপানোর দৃশ্য
পরিবারসহ বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক সাফিনুলের ৫৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পরিবারসহ বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক সাফিনুলের ৫৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন আসিফ মাহমুদ
বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন আসিফ মাহমুদ