X
সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪
১৭ আষাঢ় ১৪৩১

ফাঁসির আসামির পলায়ন: পাঁচ কারারক্ষী বরখাস্ত, ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়া প্রতিনিধি
২৯ জুন ২০২৪, ২০:১৬আপডেট : ২৯ জুন ২০২৪, ২০:১৬

বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করে চার ফাঁসির আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আট জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্য ডেপুটি জেলারসহ পাঁচ জনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিন জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

এছাড়া ঘটনার পর এই কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকি মনে করে, মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং জেএমবি সদস্যদের রাজশাহীসহ অন্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৯ জুন) বগুড়া জেলা কারাগারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামান, সর্বপ্রধান কারারক্ষী ফরিদ উদ্দিন, প্রধান দুই কারারক্ষী দুলাল মিয়া ও আব্দুল মতিন এবং কারারক্ষী আরিফুল ইসলাম। পাশাপাশি প্রধান কারারক্ষী আমিনুল ইসলাম, সহকারী প্রধান কারারক্ষী সাইদুর রহমান ও কারারক্ষী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়া কারাগারের জেল সুপার আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও কারা অধিদফতরের গঠিত পৃথক কমিটি ঘটনার তদন্ত করছে। ঘটনায় যার যার সংশ্লিষ্টরা ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এদিকে, চার ফাঁসির আসামি কনডেম সেল ছিদ্র করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চলছে তোলপাড়। এ ঘটনায় কারাগারের দুর্বল অবকাঠামো ও কর্তাদের অবহেলার বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে। ১৮৮৩ সালে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় চুন ও সুরকির গাঁথুনি দিয়ে জেলা কারাগার নির্মাণ করা হয়। জেলখানার আশপাশে অনেক সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হলেও কেউ বাধা দেয়নি। গত বছরের ১৯ অক্টোবর বগুড়া কারাগার চত্বরে একরামুল হক নামে এক রক্ষীর লাশ উদ্ধার, জেলে উচ্চবিত্ত হাজতি বা কয়েদিদের অসুস্থতার অজুহাতে জেল হাসপাতালে রাখা, বাইরের খাবার ও মাদক সরবরাহসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে।

গত ২০১৭ সালে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং মা-সহ তাকে ন্যাড়া করে দেওয়া মামলার প্রধান আসামি শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে বগুড়া কারাগারে দর্শনার্থী কক্ষে স্যালাইনের পাইপ দিয়ে ফেনসিডিল সেবন করানোর অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, সেসময় তার লোকজন কারাগারের দক্ষিণ পাশ দিয়ে ফেনসিডিলের বোতল ভেতরে নিক্ষেপ করে। কারারক্ষীরা ওইসব বোতল কুড়িয়ে তুফানের কাছে পৌঁছে দেয়। পত্রিকায় রিপোর্ট হলে তুফানকে বগুড়া থেকে কাসিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

এছাড়া ওই বছরের আগস্ট মাসে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর সঙ্গে কারাগারে তুফান সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করানোর সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠে সাবেক জেল সুপারের বিরুদ্ধে। এসব ছাড়াও অনেক প্রভাবশালী হাজতির কাছে মদের বোতল, ভাতের মধ্যে করে ভেতরে নেশাদ্রব্য পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে। সবশেষ গত ২৫ জুন রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে বগুড়া কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করে ফাঁসির চার আসামির পলায়নের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

পুলিশ ও কারা সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে গত মঙ্গলবার রাতে কনডেম সেলের ছাদ কেটে কাপড়ের রশি বানিয়ে ছাদ থেকে নেমে পালিয়ে যান চার কয়েদি। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জেলখানার অদূরে শহরের চেলোপাড়ার চাষি বাজার থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। বাথরুমের বালতির লোহার হাতল দিয়ে এক মাসের চেষ্টায় ছাদ ছিদ্র করতে সক্ষম হন আসামিরা। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ টের না পাওয়ায় নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পালিয়ে যাওয়া চার কয়েদি হলেন কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি গ্রামের মৃত ইসরাফিল খাঁর ছেলে আমির হামলা ওরফে আমির হোসেন (৩৮), বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়ার ইসমাইল শেখ চাঁদ মিয়ার ছেলে ফরিদ শেখ (২৮) এবং বগুড়ার কাহালু উপজেলার উলট পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ও বিএনপি সমর্থিত কাহালু পৌর মেয়র আবদুল মান্নান ওরফে ভাটা মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া (৩১)।

তাদের বিরুদ্ধে জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল সদর থানায় মামলা করেছেন। জেলা প্রশাসন এডিএম পিএম ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে ছয় সদস্যের এবং কারা অধিদফতর অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমান সুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বৃহস্পতিবার থেকে কমিটি তদন্ত করছে। কারাগারের ডেপুটি জেলারসহ পাঁচ জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

ফাঁসির আসামি পালিয়ে যাওয়ায় কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই এই জেলে থাকা মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ আসামি এবং জেএমবির জঙ্গিদের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাঈম মণ্ডল, শিবলু ফকির ও আবদুর রাজ্জাক এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রবিউল ইসলাম ও আবদুর রহিমকে রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জেলা কারাগারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুটি কনডেম সেলের মধ্যে জাফলং-এ চারটি ও আত্রাইয়ে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে এ ৯টি কক্ষে ১০ জন ফাঁসির আসামি রয়েছে। জাফলং সেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রেফতার চার জনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে অন্য সেলে রাখা হয়েছে। তারাসহ অন্যদের ব্যাপক নজরদারি চলছে। জেলের ভিতরে ও বাহিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক সুজন মিয়া জানান, তিনি কারাগারের ভেতরে ও বাইরে তদন্ত করছেন। প্রয়োজনীয় ছবি সংগ্রহ করেছেন।’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: নাশকতার মামলায় গ্রেফতার কাউন্সিলর কারাগারে
কারাগার থেকে ফাঁসির আসামির পলায়ন, ৩ কারারক্ষী বরখাস্ত
চট্টগ্রামে চিকিৎসক হত্যা মামলায় দুই আসামি কারাগারে
সর্বশেষ খবর
ভারতীয় পরিচয়পত্রসহ গ্রেফতার বাংলাদেশি
ভারতীয় পরিচয়পত্রসহ গ্রেফতার বাংলাদেশি
পাঁচ দফা জানাজা শেষে রাজশাহীতে নাদিম মোস্তফার দাফন
পাঁচ দফা জানাজা শেষে রাজশাহীতে নাদিম মোস্তফার দাফন
‘কলমের শক্তি আছে বলেই বাঘা বাঘা কর্মকর্তাদের আমলনামা প্রকাশিত হয়েছে’
‘কলমের শক্তি আছে বলেই বাঘা বাঘা কর্মকর্তাদের আমলনামা প্রকাশিত হয়েছে’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শর্তে হাজার হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে ইউক্রেন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শর্তে হাজার হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে ইউক্রেন
সর্বাধিক পঠিত
কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবরে ‘ধন্যবাদ’ দিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব
কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবরে ‘ধন্যবাদ’ দিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব
সংবাদ প্রকাশের আগে যাচাইয়ের অনুরোধ করেছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন
প্রতিবাদলিপির বিষয়ে বললেন এসবি প্রধানসংবাদ প্রকাশের আগে যাচাইয়ের অনুরোধ করেছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন
রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বললেন গবেষক ড. ফরিদ আহসান
রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বললেন গবেষক ড. ফরিদ আহসান
জব্দ ব্রাহমা জাতের গরুগুলো কীভাবে বিক্রি করলো সাদিক অ্যাগ্রো
অনুসন্ধানে দুদকজব্দ ব্রাহমা জাতের গরুগুলো কীভাবে বিক্রি করলো সাদিক অ্যাগ্রো
সাদিক এগ্রোর জায়গায় বিনোদন পার্ক করবে ডিএনসিসি
সাদিক এগ্রোর জায়গায় বিনোদন পার্ক করবে ডিএনসিসি