জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২০ দিন পর একটি ভোটকেন্দ্রে অব্যবহৃত দুই হাজার ১০০ এবং ব্যবহৃত দেড় শতাধিক ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে।
বুধবার (২৯ মে) সকালে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের আকলাস শিবপুর শ্যামপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে এসব ব্যালট উদ্ধার করা হয়। ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অব্যবহৃত ২১টি বইয়ে থাকা দুই হাজার ১০০টি ব্যালট উদ্ধারের পর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আয়েশা খাতুন বলেন, ‘বুধবার সকালে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অব্যবহৃত ২১টি ব্যালট পেপার বইয়ে থাকা দুই হাজার ১০০টি ব্যালট উদ্ধারের পর আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদের ৭০০, ভাইস চেয়ারম্যান পদের ৭০০ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানের পদে ৭০০ ব্যালট রয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে অব্যবহৃত ব্যালট বুঝিয়ে দিতে হয়। কেন ওই সময়ের দায়িত্বশীলা বুঝিয়ে দেননি, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রথম ধাপে গত ৮ মে ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন ক্ষেতলাল সরকারি ছাইদ আলতাফুন্নেছা কলেজের প্রভাষক তানজির আহমেদ সাকিব। ওই কেন্দ্রে ভোটার তিন হাজার সাত জন। কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এক হাজার ৯৯৭টি।
কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার আকলাস শিবপুর শ্যামপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি আলমারি খোলা হয়। অফিস সহায়ক আলমারির ভেতরে একটি বস্তা দেখে তা খুলে ভেতরে অব্যবহৃত ২১টি ব্যালটের বই দেখেন। তিনি প্রধান শিক্ষককে এ কথা জানান। প্রধান শিক্ষক আজিজুল হাসান ব্যালট পাওয়ার ঘটনাটি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানান। নির্বাচন কর্মকর্তা ব্যালটগুলো বিদ্যালয়ের পিয়নের মাধ্যমে তার কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে বলেন। এরপর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফতাবুজ্জামান আল ইমরানকে জানান। সকালে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের প্রভাষক তানজির আহমেদ ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক আজিজুল হাসানের কাছ থেকে ব্যালটগুলো বুঝে নেন। এরপর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে সেগুলো জমা দেন।
এতদিন পর কীভাবে এতগুলো ব্যালট পাওয়া গেলো জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোটের পর আমরা মঙ্গলবারে আলমারি খুলেছি। আলমারির ভেতরে একটি বস্তায় অব্যবহৃত সাতটি ব্যালট বই পেয়েছি। ইউএনওকে জানানোর পর সকালে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তানজির আহমেদ সাকিব বিদ্যালয়ে এসে ব্যালটগুলো নিয়ে গেছেন।’
তবে আজ ব্যালটগুলো নিয়ে যাওয়া এবং জমা দেওয়ার কথা প্রথমে অস্বীকার করেছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তানজির আহমেদ সাকিব। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর প্রায় এক মাস হতে চলেছে। আজ ব্যালট উদ্ধারের কথা কোথা থেকে এলো। সেদিন ভোট শেষে অব্যবহৃত ব্যালট জমা দিয়েছি আমি।’
সকালে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে ব্যালট জমা দিয়েছেন, নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জেনেছি এমনটি জানানোর পর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘সহকর্মীরা ভুলে অব্যবহৃত ব্যালটগুলো ফেলে এসেছিলেন। আজ বিদ্যালয়ে গিয়ে সেগুলো এনে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি।’
ব্যালটগুলো আজ বুঝে পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান আল ইমরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ ব্যালটগুলো বুঝে পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’