সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ২০০১ সালে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতার সময় আলোচিত সেই কিশোরী (১২) ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে (৬০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানার চারাবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ইয়াছিন উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্বদেলুয়া গ্রামের নিদান আলীর ছেলে।
বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (উল্লাপাড়া সার্কেল) অমৃত কুমার সুত্রধর। তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের ৮ অক্টোবর রাতে উল্লাপাড়ায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতার জেরে সংখ্যালঘু অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর বাড়িতে হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। ওই সময় তার মা-বাবা-ভাইকে বেধড়ক মারপিট করে বাড়িতে ভাঙচুর ও দোকানে লুটপাট চালায়। পরে তাকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা ১৬ জনকে আসামি করে উল্লাপাড়া মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন বিচারক।’
১১ জনের মধ্যে পাঁচ জন পলাতক এবং বাকিরা কারাগারে আছে জানিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘পাঁচ জনের মধ্যে ইয়াছিন একজন। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি চার জনকে গ্রেফতারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।’
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসে। এরপর সহিংসতা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। ভোটের দিন ওই কিশোরী আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টের পক্ষে দেলুয়া হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে কিছুক্ষণ অবস্থান করেছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের ব্যালট জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এ কারণে টার্গেট করা হয়েছিল। ভোটে জয়লাভের পর তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। তখন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। মামলা করেও বিচার না পেয়ে তার পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের মে মাসে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ২০১১ সালের ৪ মে ধর্ষণে জড়িত থাকায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সাহায্যে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় সংগীত শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন ওই কিশোরী। ২০১৮ সালে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হন। ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র কেনেন। তিনি আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় উপ-কমিটির সদস্য।