বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌপথে ঢাকঢোল পিটিয়ে সি-ট্রাক চালু করা হলেও নাব্যতা সংকট, যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাতে গত প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সি-ট্রাক সরিয়ে নেয়।
এতে ওই রুটে চলাচলকারী মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই এ রুটে আবারও ওয়াটার বাস বা সি-ট্রাক চালু করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের জুনে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট পর্যন্ত নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা ও মথুরাপাড়ায় যমুনা নদীর নৌঘাট দিয়ে অপর পাড়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও কাজলাঘাট হয়ে মানুষের চলাচল শুরু হয়। এ রুটে প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করেন।
সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌঘাটের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। নৌকার ভাড়া ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। অথচ সড়কপথে মাদারগঞ্জ যেতে সারিয়াকান্দি থেকে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বগুড়া জেলা শহরে যেতে হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে সিরাজগঞ্জ হয়ে যমুনা সেতু পাড়ি দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা হয়ে জামালপুর যেতে হয়। সবমিলিয়ে সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। অথচ এই নৌপথ দিয়ে চলাচল করলেই এই পথের দূরত্ব কমে যাচ্ছে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার।
ফলে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ জেলায় যেতে একদিকে সময় ও অন্যদিকে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ কারণে বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌপথে ফেরি, সি-ট্রাক বা অন্য নৌযান চালুর দাবি উঠে।
জনগণের চাহিদা ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ রুটে সি-ট্রাক চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গত ২০২১ সালের ১২ আগস্ট এই রুটে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত নামে সি-ট্রাক সার্ভিস উদ্বোধন করেন। এতে নৌকা চালকরা মনক্ষুণ্ন হলেও যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি দেখা দেয়। ২০০ আসন সংখ্যার এ সি-ট্রাকে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া ধার্য করা হয়।
তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত ২২ আগস্ট থেকে আট দিন বন্ধ থাকে। এরপর চালু করা হলেও ২৩ সেপ্টেম্বর আবারও ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর যমুনা নদীতে দেখা দেয় নাব্যতা সংকট। ফলে সি-ট্রাক কামালপুরে রৌহাদহ এলাকায় ফেলে রাখা হয়। পরে সেখানে থেকে মথুরাপাড়া নৌঘাটে নেওয়া হয়। এভাবে নানা নাটকীয়তা পর
বিআইডব্লিউটিএ ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সি-ট্রাকটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
গত বছরের ২২ নভেম্বর সারিয়াকান্দিতে বিআইডব্লিউটিএ এই নৌপথে ফেরি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালুর ওপর মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সেখানে বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান প্রধান অতিথি ছিলেন। সেখানেও সি-ট্রাক চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সি-ট্রাকের ইজারাদার ও মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাহিদুর রহমান উজ্জ্বল জানান, সি-ট্রাক মেরামত করা হলেও স্থায়ী ঘাট না থাকা, ঘাটের ইজারাদার ও নৌকার মাঝিদের অসহযোগিতা কারণে তিনি এটি চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ইজারাদার জামথল ঘাটের নৌকার মাঝিদের কাছে ইজারার অর্ধেক টাকা আদায় করে তাদের জিম্মি করতেন। আর নৌকার মাঝিরা যাত্রীদের জিম্মি করেন। তিনি যাত্রীদের কাছে পারাপারের ভাড়া ১০০ টাকা ভাড়া নিলেও ইজারাদারকে ৪০ টাকা দিতে হতো। প্রতিদিন তার ১২ হাজার টাকা ব্যয় হলেও আয় হতো মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।
তিনি জানান, এরপরও সবার সহযোগিতা পেলে আবারও ওই রুটে সি-ট্রাক চালু করবেন। তবে ঘাটের ইজারাদার ও নৌকার মাঝিদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, ১৬ কিলোমিটার নৌপথে সি-ট্রাক চালু হওয়ায় বগুড়াবাসী কম ভাড়া ও অল্প সময়ে জামালপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহসহ অন্যান্য এলাকায় যাতায়াত করতে পারতেন। সি-ট্রাক বন্ধ হওয়ার পর থেকে জনগণকে আগের মতো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। এ রুটে আবারও সি-ট্রাক সার্ভিস চালুর অপেক্ষায় আছেন হাজারও মানুষ।