X
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২

যমুনার ভাঙনে বিলীন স্কুল-বাড়ি, নিঃস্ব নদীপাড়ের মানুষ

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ
০৩ জুলাই ২০২৩, ১৬:০০আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১৬:১৭

মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। সবচেয়ে বেশি ভাঙছে সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে অসহায় নদীপাড়ের মানুষ।

শনিবার (১ জুলাই) সকালে প্রবল স্রোতে আকস্মিকভাবে চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর-সলিমাবাদ গ্রাম সংলগ্ন সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এটি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার মধ্যে হলেও সীমান্তবর্তী হওয়ায় চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চরসলিমাবাদ গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনের সময় শত শত মানুষ তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখেও রক্ষা করতে পারেননি। এতে পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের মানুষের প্রায় দুই শতাধিক ছেলেমেয়ের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

যমুনার ভাঙনে বিলীন স্কুল-বাড়ি, নিঃস্ব নদীপাড়ের মানুষ

ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ, বছরের পর বছর নদীভাঙন রোধে সঠিক সময়ে কোনও কাজ হয়নি। এতে সময় মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে বরাবরের মতোই কাজ করে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নদীভাঙন কবলিত শাহজাদপুরে কৈজুরি ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামের মনি শেখ বলেন, ‘বাবার দেওয়া ছয় বিঘা ফসলি জমি ও এক বিঘার একটি বসতবাড়ি পেয়েছিলাম। বাড়িতে অন্তত পাঁচটি গাভী ছিল। গত কয়েক বছরের ভাঙনে প্রায় সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফসলি জমি আর বসতভিটা একসঙ্গে ভাঙতে শুরু করেছে। ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে রাস্তার পাশে রেখেছি, এখন নিঃস্ব হয়ে পথে নেমে গেলাম। আমার জমি যখন ভাঙা শুরু হয়, তখন থেকেই শুনছি নদীতে বাঁধ দেওয়া হবে, কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় সব শেষ হয়ে গেলো।’

এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামের মজিবর শেখ বলেন, ‘এক সপ্তাহে অনেক বসতভিটা ও কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেলো। ভাঙন বন্ধ করতে কোনও কাজ শুরু তো দূরের কথা, কেউ খোঁজ-খবর নিতেও আসেনি।’

যমুনার ভাঙনে বিলীন স্কুল-বাড়ি, নিঃস্ব নদীপাড়ের মানুষ

জালালপুরের পাকরতোলা গ্রামের সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল কৈজুরির পাঁচিলে। সেখানে ভাঙনে আমাদের বসতভিটা নদীতে চলে যাওয়ায় পাকরতোলায় এসে ঘর তুলেছি। এখন এই বাড়িও নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। দুই বছর আগেও গোয়ালে গরু, গোলাভরা ধান ছিল, এখন আমরা নিঃস্ব। ভাঙন রোধে কাজ শুরু না হলে আমাদের আর কোনও উপায় থাকবে না।’

এদিকে, চলতি বছরের ২ জুন চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া থেকে চরসলিমাবাদ পর্যন্ত নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ শুরু হয়। এর উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম। তবে উদ্বোধনের ১৩ দিনের মাথায় নির্মাণাধীন বাঁধ এলাকা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগে দুই শ্রমিককে কারাদণ্ড ও বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ফলে এ অংশে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।

অপরদিকে, কাজ বন্ধের প্রতিবাদে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের অপসারণ দাবিতে ১৫ ও ১৭ জুন ওই বাঁধ নির্মাণ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা।

সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত বছর ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০ ফুট লম্বা একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ভবনটি নদীগর্ভে চলে গেছে। এর আগে পুরাতন ভবনটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। বিদ্যালয়ে পাঠদান করার মতো আর কিছু রইলো না। তবে ঈদের কারণে ৯ জুলাই পর্যন্ত  ছুটি রয়েছ। ছুটি শেষে অন্যত্র খোলা আকাশের নিচে পাঠদান শুরু হবে।’

নাগরপুর সলিমাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীদুল ইসলাম অপু বলেন, ‘যমুনার ভাঙন কিছুতেই রোধ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ।’

চৌহালীর ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করিনি।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যমুনায় পানি বাড়ার কারণে চৌহালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে রোধের চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।’

/এফআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বর্ষা শুরুর আগেই ভাঙন, শঙ্কায় রায়পুরের মেঘনাপাড়ের বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরে চলছে বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ, পুনর্বাসন চান বাসিন্দারা
আশাশুনিতে বিকল্প বাঁধে স্বস্তি, পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ
সর্বশেষ খবর
ককটেল বিস্ফোরণ ও অস্ত্র হাতে মিছিল, কুমিল্লা নগরে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক
ককটেল বিস্ফোরণ ও অস্ত্র হাতে মিছিল, কুমিল্লা নগরে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক
ভুল তথ্যে বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের সভাপতিকে শোকজের অভিযোগ
ভুল তথ্যে বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের সভাপতিকে শোকজের অভিযোগ
কুয়েটের ভিসি ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন জারি
কুয়েটের ভিসি ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন জারি
মা-বোনেরা ঝাড়ু হাতে রাখবেন, আ.লীগ ফিরে এলে পিটিয়ে বিদায় করবেন: টুকু
মা-বোনেরা ঝাড়ু হাতে রাখবেন, আ.লীগ ফিরে এলে পিটিয়ে বিদায় করবেন: টুকু
সর্বাধিক পঠিত
তরমুজের খোসা ত্বকে ঘষলে যেসব উপকার পাবেন
তরমুজের খোসা ত্বকে ঘষলে যেসব উপকার পাবেন
আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি
আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি
‘২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে ৭০ মামলার ভয় দেখায় ডিজিএফআই’
‘২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে ৭০ মামলার ভয় দেখায় ডিজিএফআই’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
১৬ বছর পর রাঙামাটি টেক্সটাইল মিলস চালুর উদ্যোগ
১৬ বছর পর রাঙামাটি টেক্সটাইল মিলস চালুর উদ্যোগ