‘৮৭ সালের বন্যায় ভেঙে গিয়েছিল সেতুটি। উদ্বোধনের মাত্র ১২ দিনের মাথায় বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে পড়ে সেটি। সেই থেকে চরম ভোগান্তিতে আছেন ১২ গ্রামের মানুষ। প্রতিবার ভোটের সময় এমপি, চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজটি করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ২৫ বছরেও সেটি পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। সেতুটি এলাকার মানুষের দুর্ভোগের অপর নাম।
জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার রাউৎনগর এলাকায় সেতুটি ভেঙে পড়ায় নদীর দুই পাশের রসুলপুর, বর্ম্মপুর, বসতপুর, চাপর, বিরাশী, বদ্দখন্ড, গোগর, রানীভবানীপুর, লেহেম্বা ও কোচল গ্রামসহ ১২ গ্রামের মানুষকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, লেহেম্বা ও হোসেনগাঁও দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কুলিক নদীর ওপর ১৯৮৬-৮৭ সালে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। উদ্বোধনের ১২ দিনের মাথায় ভেঙে পড়ে সেটি। ১৯৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যার তীব্র স্রোতে সেতুর দু-পাশের অংশ ভেঙে পড়ে। তখন থেকেই ওই দুই ইউনিয়নের মানুষ চরম দুর্ভোগে আছেন।
এ ব্যাপারে রাণীশংকৈল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসেন জানান, নদীতে সেতু না থাকায় এলাকার মানুষকে ১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে রাউৎনগর ও কাঠালডাঙ্গী বাজারে যাতায়াত করতে হয়। অথচ এটি থাকলে আধা কিলোমিটারের মধ্যে বাজারে যাতায়াত করতে পারতো তারা। এ অবস্থায় পণ্য হাট বাজারে নিতে ট্রাক্টর ও ট্রলি পার করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।
রসুলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, প্রতিবার নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যান ও এমপি প্রার্থীরা এ নদীর সেতুটি সংস্কারের আশ্বাস দিয়ে ভোট নেওয়ার পর সব কিছু ভুলে যান। ফলে ২৫ বছরেও এ সেতুটি চলাচলের যোগ্য করা হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিকল্প হিসেবে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় কাঠ ও বাঁশের সাঁকো তৈরি করে আপাতত কাজ চালাচ্ছেন। তবে সেটি ব্যবহার করতে হলে পথচারীদের দিতে হয় টাকা। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পানির নিচে সাঁকোটি তলিয়ে যাওয়ায় পথচারীদের দুভোর্গের শেষ থাকে না।
বসতপুর গ্রামের গৃহবধু সাহেরা খাতুনের অভিযোগ, রোগীকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে দেরি হওয়ায় তিনি পথেই মারা যান। একই কারণে চিকিৎসকরাও যেতে চান না সেসব এলাকায়।
রাণীশংকৈল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আনোয়ার জানায়, বর্ষাকালে স্কুল-কলেজ যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যবসায়ি আজগর আলী জানান, এই সেতুটির জন্য মাল পরিবহনে অনেক বেশি খরচ হয়।
লেহেম্বা গ্রামের মজুর আলতাফ বলেন, সেতুর এপাড়ের মানুষকে সদরের চাইতে বেশি দামে বিভিন্ন জিনিস কিনতে হয়। আবার এপারের হাট বাজারে কৃষকরা ধান পাট যাই বিক্রি করতে যাক সেক্ষেত্রে তারা একই অজুহাতে কম মূল্য পেয়ে থাকেন।
হোসেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বলেন, ‘নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারায় যন্ত্রণায় আছি। তবে এ সেতুটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে অনেকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।’
রাণীশংকৈল উপজেলা প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম বলেন, সেতুর বিষয়ে বিভাগীয় উন্নয়ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেতুটি ১০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ হওয়ায়, এটার বরাদ্দ উপজেলা প্রকৌশল অফিসের ক্ষমতার বাইরে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করেছি। কিছুদিন আগে লোকজন এসে মাপযোগ করে নিয়ে গেছেন। আশা করছি তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন।’