সংকল্প, সাহস আর পরিশ্রমে যে অনেক কিছুই সম্ভব তা বাস্তবে করে দেখিয়েছেন সালমা আক্তার। তার তরমুজ বাগানের চোখ ধাঁধানো ফলন তারই সাক্ষ্য বহন করছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার এই নারী চাষি এলাকার মানুষের সামনে আজ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্বামীকে নিয়ে দিন-রাত খেটে সালমা ঘটিয়েছেন নীরব তরমুজ বিপ্লব। সব ঠিকঠাক থাকলে এবার লাখ টাকার তরমুজ বেচবেন তিনি।
পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের আঙ্গিয়াদী গ্রামের একমাত্র নারী চাষি সালমা। সফল চাষি হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। কৃষিতে আগ্রহ ও পরিশ্রম করার মানসিকতা দেখে কৃষি বিভাগ গত বছর তাকে ইন্দোনেশিয়া পাঠিয়েছিল প্রশিক্ষণের জন্য। সেই প্রশিক্ষণ মাঠে প্রয়োগ করে বাজিমাত করছেন সালমা। আর সহযোদ্ধা হিসেবে স্বামী আতাবুরকে পাশে পেয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী তিনি।
বাগানে ঢুকলে দেখা যাবে ঝাঁকে ঝাঁকে তরমুজ ঝুলে আছে মাচায়। এ যেন তরমুজ রাজ্য। ক’দিন পরেই বিক্রিযোগ্য হবে এগুলো।
তরমুজ ক্রেতা বাক্কার মিয়া বলেন, ‘আমি তরমুজ কিনতে এখানে এসেছি। তার বাগানে তরমুজ দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আর এটা বারোমাসি তরমুজ এবং ফলনও দেখছি অনেক ভালো হয়েছে। এই তরমুজ বাগান দেখে আমারও একটি তরমুজ বাগান করার ইচ্ছা রয়েছে।’
সালমা জানান, নিজের জমিজমা নেই। ভাড়া জমিতে কৃষিকাজ করেন। ১০ শতাংশ জমিতে বারোমাসি জাতের তরমুজ চাষে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাঁচ থেকে ছয়শ’ তরমুজ বেচতে পারবেন তিনি। প্রতিটি তরমুজের ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি হবে। অসময়ের তরমুজ বলে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হবে অনায়াসে। এরইমধ্যে অনেকে তরমুজ কিনতে ভিড় করছেন বাগানে। কেউ আবার চাষ পদ্ধতি শিখতে আসছেন তার কাছে।
কৃষক শামছুদ্দিন খান রতন জানান, তাদের তরমুজ চাষে সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই তাদের কাছে এ চাষ পদ্ধতি শিখতে ও জানতে আসছেন। বারোমাসি এ তরমুজে ফলন অনেক ভালো। কৃষি অফিসের সঙ্গে পরামর্শ করে আমিও কিছু জমিতে এ তরমুজ চাষ করবো।
পাকুন্দিয়ার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হামিমুল হক সোহাগ জানান, এ কৃষক দম্পতিকে বারোমাসি তরমুজ চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তারা সে পরামর্শ মোতাবেক তরমুজ চাষে অনেক ফলন পেয়েছে। আশা করি এ তরমুজ চাষ সম্প্রসারিত হলে এলাকার অন্যান্য চাষিও উপকৃত হবেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল হাসান আলামিন জানান, কৃষক দম্পতির সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও বারোমাসি তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যে জমিগুলোতে তরমুজের চাষ হয়েছে সেখানে ব্যাপক ফলন হয়েছে। বাজার মূল্যও ভালো পাওয়া যাবে। আশা করি আরও অনেকে এ তরমুজ চাষে আগ্রহী হবেন।