ছেলেকে হারিয়ে শোকাতুর ছিলেন আতে বেগম। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ভাইয়ের লাশ রেখে মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কাঁদছিলেন বোন লাকী। বিষণ্ন হয়ে বসা ছিলেন চাচা মাসুদ। হঠাৎ একটা তীব্র ঝাঁকি খেয়ে তারা এর-ওর গায়ে গড়িয়ে পড়তে থাকলেন। কিছু একটার সঙ্গে প্রচণ্ড জোরে মাথা ঠুকে গেলো লাকীর। চারবার ডিগবাজি খেয়ে তারা নিজেদের আবিষ্কার করলেন পুকুরে। স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে এসে উদ্ধার করায় প্রাণে বেঁচেছেন সবাই, তবে মা-মেয়ের ফেটেছে মাথা। আর চাচা পেয়েছেন বুকে আঘাত।
রাজশাহী থেকে মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে বাড়ির কাছেই দুর্ঘটনায় উল্টে পুকুরে পড়া একটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরের গল্প এটি। বুধবার (২৪ জুন) সকাল পৌনে ৯টার দিকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়নের সান্যালপাড়ার ইসমাইলের পুকুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় চারবার ডিগবাজি খেয়ে রাস্তা থেকে ১৩ ফুট নিচের পুকুরে পড়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি । তবে পুরোপুরি ডুবে না যাওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চার ব্যক্তি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাগাতিপাড়া থানার ওসি নাজমূল হক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ওহিদুল ইসলাম গোকুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আহতরা হলো নিহতের মা আতে বেগম (৬০), চাচা মাসুদ (৫০) ও বোন লাকী (৪০)।
জানা গেছে, ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামের আতিয়ার (৩৫) নামে এক ব্যক্তি বেশ কিছু দিন থেকে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। একপর্যায়ে তার প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হওয়ায় চারদিন আগে তাকে নাটোর সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মঙ্গলবার রাত ২টা ২১ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
মৃতের ভগ্নিপতি আব্দুল হান্নান জানান, খবর পেয়ে ভোরে তিনিসহ আরও তিন জন রাজশাহী যান এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছেই সান্যালপাড়ায় ওই পুকুরের কাছে চালকের ভুলের কারণে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এটি চারবার ডিগবাজি খেয়ে প্রায় ১৩ ফুট নিচে পুকুরে পড়ে যায়। অ্যাম্বুলেন্সটি অর্ধেক পুকুরে আর বাকি অর্ধেক শুকনোতে থাকায় সবাই প্রাণে বেঁচে গেছেন। তবে মৃত আতিয়ারের মা আতে বেগম (৬০), চাচা মাসুদ (৫০) ও বোন লাকী (৪০) আহত হন। খবর পেয়ে পাশের গ্রাম থেকে তার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়রা ছুটে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। একইসঙ্গে ভ্যানযোগে মরদেহটি বাসায় নিয়ে যায়।
বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ফরিদুজ্জামান জানান, লাকী নামে এক মহিলার মাথায় চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
গাড়ির মালিক রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর এলাকার সাদ্দাম জানান, চালক হিসেবে ওই গাড়িতে ছিল সোহাগ, সঙ্গে ছোট এক ছেলে হেলপার হিসেবে ছিল। সোহাগ তাকে জানায়, রাস্তার পাশে একটা খাদ থাকলেও তা জঙ্গলে ঢেকে থাকায় বুঝতে পারেনি। ওই খাদে চাকা পড়ে অ্যাম্বুলেন্সটি উল্টে যায়। এতে গাড়িটির বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত ও চালক আহত হয়েছে। যা ভাড়া পেয়েছে তার ডাবল লাগবে গাড়িটি তুলতে।
বাগাতিপাড়া থানার ওসি নাজমূল হক জানান, গাড়িটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়দের দাবি, এই স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তাটি সংস্কার ও পুকুর পাড়ে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ওহিদুল ইসলাম গোকুল জানান, রাস্তাটি সংস্কার ও রাস্তা সংলগ্ন পুকুরের ভাঙন রোধে প্যালাসাইটিং (রাস্তা ও পুকুরের মাঝে প্রাচীর)-এর জন্য আবেদন করা হয়েছে। পাস হলেই কাজটি শুরু করা হবে।