সাতক্ষীরায় বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। সারাবছর খরচের পর এখন ফসল ঘরে তোলার সময়। ঠিক এই সময়ে জেলার কিছু কিছু এলাকায় ধানক্ষেতে নেক ব্লাস্ট (গলাপচা) রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ রোগের প্রাদুর্ভাবে ক্ষেতের ধানের শীষ আস্তে আস্তে সাদা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হলেও এখনও অনেক এলাকায় ধান পাকতে শুরু করেছে। সেগুলো দুই সপ্তাহের মধ্যে কাটার পর্যায়ে যাবে। তবে বেশ কিছু এলাকার ধানের শীষে নেক ব্লাস্ট রোগ হওয়ায় আশানুরূপ ধান ফলন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলায় ৭৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর কম।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, এখন পর্যন্ত জেলার তালা, কলারোয়া ও সদর উপজেলা কিছু জমির ধান ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দিনের বেলায় গরম আর রাতে ঠান্ডা পড়ায় ২৮ জাতের ধানক্ষেতে ওই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। যেসব জমি এখনও সংক্রমিত হয়নি বা কেবল সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, সেগুলোতে প্রতিরোধক হিসেবে কাসোবিন, নাটিভো ট্রপার ছত্রাকনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের আজিজুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, নজরুল, মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মাঠের অধিকাংশ ধান পাক ধরার মুখে আছে, কিন্তু ধানের শীষ সাদা হয়ে সব চিটা হয়ে যাচ্ছে।
কলারো উপজেলার কয়েকজন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক জমির বোরো ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। শীষের গোড়ায় প্রথমে এ রোগ দেখা দিয়ে ক্রমান্বয়ে তা পুরো শীষকে গ্রাস করছে। এই রোগটি বিশেষ করে ২৮ ও ৬৩ জাতের ধানে বেশি আক্রমণ করছে। করোনার কারণে সব ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। এদিকে ধানের নেক ব্লাস্ট আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার অনেক চাষি।
সদরের আগরদাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করেছি। গাছ দেখে মনে হয়েছিল ফলন ভালো হবে। কিন্তু হঠাৎ করে রোগে ক্ষেতের ধানের শীষগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওষুধ দিয়েও ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’
কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের ধান চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, তার এলাকার অনেক ক্ষেতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক দিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ রোগ দমনে সঠিক পরামর্শের জন্য কীটনাশকের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন।
তালা উপজেলার আমতলা ডাঙ্গা গ্রামের জামাল হোসেন ৩ বিঘা জমি ভাগে নিয়ে ২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ধানে গলা পাচা রোগ দেখা দিয়েছে। জমিতে তিনবার স্প্রে করেছি। এবার জমির মালিককে কোন জায়গা থেকে ধান দেবো, সেই চিন্তায় আছি।’
কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মহাসীন আলী জানান, এবার কলারোয়া উপজেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাম্পার ফলনের আশা করছি। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে, খুব দ্রুত কাটা শেষ হয়ে যাবে। আমরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। এখন নেক ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলায় ৭৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু আমাদের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮০ হাজার হেক্টর জমি। সরিষার আবাদ দেরিতে হওয়ায় অনেকে চাষি বোরোর আবাদ করতে পারেননি। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম আবাদ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দিনের বেলায় গরম আর রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় ২৮ জাতের ধান ক্ষেতে ওই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। খুব অল্প কিছু জায়গায় বোরো ধানক্ষেতে নেক ব্লাস্ট (ধানের গলাপচা) রোগের আক্রমণ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও আমিসহ উপসহকারী কৃষি অফিসাররা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের মধ্যে পরামর্শ দিচ্ছি। এখন নেক ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেলার সব উপজেলায় ধান কাটার পর্যায়ে। এ সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ ধান কাটা হয়ে যাবে। এ কারণে খুব একটা সমস্যা হবে না।’