X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

এমপিওভুক্তির খবর শুনে ভবন নির্মাণ শুরু!

সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, পঞ্চগড়
২৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:০৬আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:২৩

মাঠের মধ্যে নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের সাইন বোর্ড নতুন এমপিওভুক্তি পাওয়া ২৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরী ইউনিয়নের নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। তালিকায় নাম উঠলেও প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবে নেই। জানা গেছে, এমপিওভুক্ত হওয়ার পর বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতের আঁধারে সাইনবোর্ড বসানো, ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতার প্রমাণও পেয়েছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর করতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি দেলদার রহমান সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দেন। 

কাগজে-কলমে ২০০৩ সালে কলেজটির প্রতিষ্ঠা দেখানো হলেও বাস্তবে এর কোনও অস্তিত্ব ছিল না। কলেজের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা হতো, তা স্থানীয়রা জানাতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, বিসিক নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস হতো।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সরেজমিন দেখা গেছে, ঝলই শালশিরী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন হোসনাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পাশে একটি পরিত্যক্ত জমিতে সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী তো দূরের কথা, কলেজের কোনও অফিস ভবন ও শ্রেণিকক্ষ নেই। কয়েকজন শ্রমিক বালু ফেলার কাজ করছেন। কেউ কেউ ইটের গাঁথুনির কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে ওই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি দেলদারের ভয়ে স্থানীয়রাও মুখ খুলছেন না।

কলেজের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে খবর নিয়ে জানা গেছে, দেলদার পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিসিক নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ। এছাড়া নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের  সভাপতিও তিনি। আর তার স্ত্রী শামিমা নাজনিন এই কলেজের অধ্যক্ষ। দেলদার রহমানের বিরুদ্ধে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএম অধ্যক্ষ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তিনি প্রভাব খাটিয়ে এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে তার লোক রয়েছে। যার কারণে তার প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির তালিকায় আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা গেছে, শুধু নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের চিত্রই এমন না, এমপিওভুক্ত হওয়া পঞ্চগড়ের বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও নাজুক। কাগজে-কলমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা কার্যক্রম চললেও বাস্তবে সব চিত্রই উল্টো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের অবকাঠামো, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দেখিয়ে আবেদন করেন। এছাড়া অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ, ভুয়া শাখা এবং শিক্ষার্থীর তথ্য দেওয়া হয়। 

কলেজের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, বেশ কয়েক বছর আগে ভাড়া ঘরে ওই প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখা গিয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনও কার্যক্রম দেখতে পায়নি তারা। কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তি তালিকায় গেলো, সেটিই বড় প্রশ্ন। 

এ বিষয়ে দেলদার জানান, ‘কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০। শিক্ষক আছেন ৬ জন। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজ থেকে ৬০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পাস করে ৫৮ জন।’ বাস্তবে না থাকলেও কাগজে কলমে সব ঠিকঠাক রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

রাতারাতি ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ঘর আমি যখন খুশি তখন উঠাবো।’

কলেজের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্য দেখতে ও জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং একপর্যায়ে কলেজ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে চাঁদাবাজির মামলা করবেন বলে হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেন। 

ঝলই শালশিরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘যেভাবেই হোক প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি খুশি।’ 

বোদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন এমপিওভুক্তির আবেদন বাছাই কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান বাছাই করে সরকারের কাছে সুপারিশ করে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে।’ 

কলেজের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায় সিংহ (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে তারাই ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিস বা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কোনও হাত নেই।’ 

এই প্রতিষ্ঠানটি ছাড়াও এমপিওভুক্ত হওয়া আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের সন্দেশ দিঘি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও করুণ। বিদ্যালয়টির নামমাত্র একটি ভবন থাকলেও তাতে নেই কোনও বসার ব্যবস্থা। এমপিওভুক্তির নীতিমালা না মেনে কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির নামের তালিকায় আসে, এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।

/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রধানমন্ত্রী নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার চায় এনসিপি: নাহিদ ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার চায় এনসিপি: নাহিদ ইসলাম
মাদারীপুরের শিবচর থেকে ককটেল-গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার
মাদারীপুরের শিবচর থেকে ককটেল-গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার
গৃহকর্মী-যৌনকর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ
গৃহকর্মী-যৌনকর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ
সবার জন্য উন্মুক্ত হবে মাঠ, কোনও ক্লাবের দখলে থাকবে না: ডিএনসিসি প্রশাসক
সবার জন্য উন্মুক্ত হবে মাঠ, কোনও ক্লাবের দখলে থাকবে না: ডিএনসিসি প্রশাসক
সর্বাধিক পঠিত
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
চীনের অর্থনীতি আবারও চমকে দিলো বিশ্বকে
চীনের অর্থনীতি আবারও চমকে দিলো বিশ্বকে