‘পুলিশ তো হামার ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। পুলিশের দেওয়া আগুনে হামার তিনটি ঘর, মালামাল সব তো শেষ হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান পালিয়ে বেঁচেছে। আমি এর বিচার চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দা মাদারপুর গির্জার মাস্টার বার্নাবাস টুডু।
হামলার পর গঠিত ত্রাণ কমিটির সদস্য বার্নাবাস টুডু আরও বলেন, ‘পুলিশ প্রথমে মুংলি মার্ডির ঘরে আগুন দেয়। পুলিশের গুলিতে মুংলি মার্ডি আহত হয়। তার পায়ে গুলি লাগে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। একে একে হিবন, চনু লালসহ সবার বাড়িতে আগুন দেয় পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘ভিডিও দেখে হামার গা কেঁপে উঠেছে। ঠিক এটাই তো ঘটনা। পুলিশ যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাতো ভিডিওতেই আছে। তবে পুলিশের সঙ্গে মিলের কর্মচারীরাও ছিল। তারাও হামলা ও আগুন দেওয়ায় সহযোগিতা করে।’
তিনি দাবি করেন, সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, শাকিল আহমেদ বুলবুল, চিনিকলের এমডি আবদুল আউয়ালের ইন্ধনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু মামলা হলেও এখনও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার সাড়ে তিন মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। ভিডিওটি প্রকাশের পর থেকেই জেলার সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ফুটেজ দেখে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সাঁওতালরা।
মাদারপুর সাঁওতাল পল্লীর গির্জার সামনে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া পলুস মুরমু মাস্টার বলেন, ‘ঘটনার দিন প্রথমে পুলিশ সদস্যরা আমার বসতঘরে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ছাড়াও সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ছিলেন। একে একে তারা জমির ওপর শতশত ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে চলে যান।’
জয়পুরপাড়ার সরেন কিসকো বলেন, ‘ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুলিশই হামলা, আগুন, গুলি চালায়। পুলিশের সঙ্গে মিলের লোকজনসহ সাদা পোশাকে আরও অনেকে ছিল। প্রথমে পুলিশ গুলি ছুড়লে প্রাণভয়ে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে দৌড় দেই। দৌড়ে একটু সামনে গিয়ে থামি। পেছনে তাকিয়ে দেখিয়ে ঘরে আগুন জ্বলছে।’
বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত ভিডিও প্রসঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেছি। সেটি কোথা থেকে কিভাবে হয়েছে তা জানা নেই। ফুটেজে দেখা পুলিশ সদস্যদের আমি চিনি না। তারা আমার থানার নয়।’
ওই পুলিশ সদস্যরা তাহলে কোন থানার জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘বিষয়টি নিশ্চিত নয়। তবে এই অভিযানে দিনাজপুর ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ অংশ নেয়।’ তবে ফুটেজের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সুব্রত কুমার সরকার।
পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম (বিপিএম, সেবা) জানান, ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। অভিযানে জেলা পুলিশের পাশাপাশি দিনাজপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ অংশ নেয়। এছাড়া র্যাব সদস্যরাও সেখানে ছিল। ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রংপুর চিনিকলের আওতাধীন মহিমাগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল আউয়াল জানান, ভিডিও ফুটেজ সম্পর্কে তার জানা নেই। ৬ নভেম্বর হামলার ঘটনায় চিনিকলের কোনও শ্রমিক-কর্মচারী সাঁওতালদের বসতিতে আগুন দেয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
পুলিশের দেওয়া আগুনের ভিডিও তদন্তে নেমেছে পুলিশ
/বিটি/এএআর/