ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় সালিশে না যাওয়ায় বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। সোমবার সকালে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ফুলবাড়ীয়া থানায় মামলাটি করেন।
পুলিশ জানায়, মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তারা হলেন- পলাশীহাটা গ্রামের মো. রিপন (৩২), নাওগাঁও গ্রামের মো. মোজাম্মেল হক (৬৫) ও এক কিশোর (১৩)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রবিবার দুপুরে উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের নাওগাঁও দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গফুর (৫০) ও তার ছেলে মেহেদী হাসানকে (১৫) কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সোমবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠায়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়। রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-ছেলেকে দাফন করা হবে।
ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘সালিশে না যাওয়াকে কেন্দ্র করে বাড়িতে গিয়ে গণপিটুনি দিয়ে বাবা-ছেলেকে হত্যা করা হয়। মামলার এজাহারে সেটিই উল্লেখ করা হয়েছে। তিন জন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জড়িত ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
নিহত আবদুল গফুরের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর চাচাতো ভাই আবদুল মোতালেবের কাছে সাড়ে ৪৫ শতক জমি পাঁচ বছর আগে বন্ধক দিয়েছিলাম। দুই লাখ টাকা জমি বন্ধক দিলেও তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আরও পাঁচ বছরের জন্য এক লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকা ও জমি কিছুই দিতে চাইছিলেন না আবদুল মোতালেব। পরে আমার স্বামী অন্য জায়গায় জমি বন্ধক দিতে চাইলে তাতেও বাধা দেন। ওই অবস্থায় স্থানীয়ভাবে সালিশে বসে তিন মাস আগে এক লাখ টাকা দিলেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন মোতালেব।’
শিল্পী বেগম বলেন, ‘মেহেদী আমার স্বামীর প্রথম পক্ষের ছেলে। সে একটু বখাটেপনা করতো। চার-পাঁচ দিন আগে আবদুল মোতালেবের ফিশারি থেকে দুটি তেলাপিয়া মাছ ধরায় ক্ষুব্ধ হয়ে বকাঝকা করে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। এর মধ্যে প্রতিবেশী বিদেশফেরত একজনের কিছু কাগজ ও মোবাইল চুরি হওয়ায় এর অপবাদ দেয় মেহেদীকে। এ নিয়ে সালিশ বসালে আমার স্বামী ছেলেকে নিয়ে যায়নি। সে কারণে বাড়িতে এসে হামলা করে হত্যা করে। হামলা দেখে আমি পাশের এক ভাশুরের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলাম। আমি থাকলে আমাকেও তারা মেরে ফেলতো।’