ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় চুরির অভিযোগে ডাকা সালিশে না আসায় বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার নাওগাঁও পশ্চিমপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নিহত বাবা-ছেলের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নিহতরা হলেন- নাওগাঁও পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গফুর (৫০) ও তার ছেলে মেহেদী হাসান (১৫)। জমি নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে চুরির অপবাদ দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। এ সময় তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, আবদুল গফুরের প্রতিবেশী প্রবাসী রাশেদ কিছুদিন আগে দেশে আসেন। দুই দিন আগে তার ঘর থেকে কিছু কাগজ ও একটি মোবাইল চুরি হয়। এ ঘটনায় আবদুল গফুরের ছেলে মেহেদী হাসানকে অভিযুক্ত করে রবিবার বেলা ১১টার দিকে সালিশ বসানো হয়। রাশেদের বাড়ির সামনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মঞ্জুরুল হকের নেতৃত্বে সালিশটি বসে। কিন্তু চুরির সঙ্গে মেহেদী জড়িত নয় দাবি করে সালিশে যাননি বাবা-ছেলে।
সালিশ বসার পর সেখান থেকে লোকজন গিয়ে আবদুল গফুরকে তার ছেলেকে নিয়ে হাজির হতে বলেন। কিন্তু সালিশের ডাকে হাজির না হওয়ায় সেখানে থাকা লোকজন আবদুল গফুরের বাড়িতে দুপুর ১টার দিকে গেলে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এর জেরে আবদুল গফুরের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো শুরু করেন সালিশের লোকজন। তারা গফুর ও তার ছেলেকে রড দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করেন। খবর পেয়ে ফুলবাড়িয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে বাবা-ছেলের লাশ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন পলাশীহাটা গ্রামের মো. রিপন (৩২), নাওগাঁও গ্রামের মৃত সাবান আলীর ছেলে মো. মোজাম্মেল হক (৬৫) ও এক কিশোর (১৩)।
ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘নিহত বাবা-ছেলের সঙ্গে প্রতিবেশীর জমি নিয়েও বিরোধ ছিল। জমি নিয়ে বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জেরে চুরির অপবাদ দিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হবে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’
নিহত আবদুল গফুরের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর চাচাতো ভাই আবদুল মোতালেবের কাছে সাড়ে ৪৫ শতক জমি পাঁচ বছর আগে বন্ধক দিয়েছিলাম। দুই লাখ টাকা জমি বন্ধক দিলেও তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আরও পাঁচ বছরের জন্য এক লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকা ও জমি কিছুই দিতে চাইছিলেন না আবদুল মোতালেব। পরে আমার স্বামী অন্য জায়গায় জমি বন্ধক দিতে চাইলে তাতেও বাধা দেন। ওই অবস্থায় স্থানীয়ভাবে সালিশে বসে তিন মাস আগে এক লাখ টাকা দিলেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন মোতালেব।’
শিল্পী বেগম বলেন, ‘মেহেদী আমার স্বামীর প্রথম পক্ষের ছেলে। সে একটু বখাটেপনা করতো। চার-পাঁচ দিন আগে আবদুল মোতালেবের ফিশারি থেকে দুটি তেলাপিয়া মাছ ধরায় ক্ষুব্ধ হয়ে বকাঝকা করে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। এর মধ্যে প্রতিবেশী বিদেশফেরত একজনের কিছু কাগজ ও মোবাইল চুরি হওয়ায় এর অপবাদ দেয় মেহেদীকে। এ নিয়ে সালিশ বসালে আমার স্বামী ছেলেকে নিয়ে যায়নি। সে কারণে বাড়িতে এসে হামলা করে হত্যা করে। হামলা দেখে আমি পাশের এক ভাশুরের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলাম। আমি থাকলে আমাকেও তারা মেরে ফেলতো। ঘটনার পরপরই সালিশকারীরা ঘা ঢাকা দিয়েছে।’