মধ্যরাতের নীরবতা ভেঙে হঠাৎ ভেসে এলো উত্তেজিত জনতার চিৎকার। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়লো আর্তনাদ। শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে দক্ষিণ নকলা এলাকায় রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় চোর সন্দেহে ক্ষিপ্ত জনতার পিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন মুসলিম উদ্দিন (৪৫)। একই ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন।
নিহত মুসলিম উদ্দিন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের গোমড়া এলাকার মৃত মইজ উদ্দিনের সন্তান। তার সঙ্গে ছিলেন একই এলাকার আমির হোসেন (৩০), আজি রহমান (১৯), রাজু মিয়া (২৫), আয়নাল হক (৩৪) ও পাশের সন্ধ্যাকুড়া এলাকার মো. সাদ্দাম (৩০)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে, রাতের অন্ধকারে মহাসড়কের পাশে কয়েকজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেউ কেউ ‘গরু চোর’ বলে ছড়িয়ে দেন। বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে খবর। কোনও যাচাই-বাছাই ছাড়াই শত শত মানুষের ভিড় জমে যায় সেখানে। শুরু হয় নির্যাতন।
নকলা থানার পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছয় জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুসলিম উদ্দিন মারা যান। অন্য পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আব্দুল করিম জানান, লাশের ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি এ ধরনের গণপিটুনির ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনের শাসন উপেক্ষা করে নিজ হাতে বিচারের এই প্রবণতা সমাজে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। একটি সন্দেহের জেরে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এর ফলে সামাজিক সংহতি ও আইনের শাসন হুমকির মুখে পড়ছে।
নকলা থানায় এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।