ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে নিয়ম শেখানোর নামে একটানা সাড়ে তিন ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের ঘটনায় ২৮ জনকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বাকৃবি কর্তৃপক্ষ বলছেন, র্যাগিংয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে এবং দায়ী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ভুক্তভোগী ফিশারিজ অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত ৯টায় বাকৃবির হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের রিডিং রুমে আমাদের প্রথম বর্ষের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ডেকে আনেন হলের সিনিয়ররা। ডেকে এনে প্রথমে আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে পরে হলের নিয়ম কানুন শেখানোর নামে সাড়ে তিন ঘণ্টা একটানা দাঁড় করিয়ে রেখে র্যাগ দেন। এ সময় আমাদেরকে বলা হয়, সিনিয়রদের সামনে সাইকেল চালানো যাবে না, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ব্যবহার করা যাবে না এবং যতবার দেখা হবে ততবার সালাম দিতে হবে। এ সময় তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করে এবং গালাগালি পর্যন্ত করে। এসব ঘটনায় প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অপর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, বাকৃবিতের নতুন এসেছি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল সিনিয়র বড় ভাইয়েরা আমাদেরকে স্নেহের চোখে দেখবেন এবং ভালো আচরণ করবেন। কিন্তু আমাদের কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে যেভাবে দাঁড় করিয়ে রেখে অশোভন আচরণ করা হলো- এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার পর থেকে আমরা রাতে ঘুমাতে পারছি না। জীবনে কোনোদিন এ ধরনের অপমান সইতে হয়নি। তবে ঘটনার জানার পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি। তবে এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের ঘটনায় ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে র্যাগিংয়ের ঘটনা তেমন একটা ঘটেনি। তবে শনিবার রাতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে র্যাগিংয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে বিষয়ে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে, এমনটাই সবার দাবি।
তাবাসসুম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ৫ আগস্টের পর প্রত্যাশা করেছিলাম বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের মতো ঘটনা ঘটবে না। তবে এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ সব মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ঘটনা জানার পরপরই রবিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮ শিক্ষার্থীকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে বের করে দেওয়া হয়েছে।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে সেটি বর্বরতার শামিল দাবি করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর বজলুর রহমান মোল্লা জানান, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫৬ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনাটি প্রমাণিত হয় এবং দায়ীরা স্বীকার করায় হলের ২৮ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে পুরো ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে এবং তথ্য প্রমাণাদিসহ পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ডিসিপ্লিনারি কমিটি অধিক তদন্তপূর্বক এ বিষয়ে আরও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রভোস্ট থাকা অবস্থায় কোন শিক্ষার্থীকেই র্যাগিংয়ের শিকার হতে দেবো না।
বাকৃবির প্রক্টর প্রফেসর ড. আব্দুল আলীম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে হলের প্রভোস্টসহ আমরা বসে ২৮ শিক্ষার্থীকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও তদন্ত করে যদি গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।