নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার প্রধান উন্মুক্ত জলাশয় ধনু নদ। এই নদে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার উৎসব চলছে। বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয় কয়েকটি গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়েছে। তবে কিছুতেই থামছে না বালু উত্তোলন। অপরদিকে নৌপথে চলছে চাঁদাবাজির ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গাগলাজুর বাজার, মান্দারবাড়ি গ্রাম, মহব্বত নগর গ্রাম, আবুর চড় ও পাতরা এলাকায় ধনু নদী থেকে গত তিন-চার বছর ধরে বালু তুলছে এলাকার প্রভাবশালী একটি বালু ব্যবসায়ী চক্র। এ ছাড়া ওই নদ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নৌপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি চাঁদাবাজ চক্র। বালু উত্তোলনকারীরা প্রতিদিন প্রত্যেক বাল্কহেড বালুর জন্য চাঁদাবাজ চক্রকে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা করে দিচ্ছে। এভাবে দিনে ৩০-৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে বলে এলাকাবাসীর আভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলার বুক দিয়ে প্রবাহিত সুরমা ও মেঘনা নদীর সংযোগ রক্ষাকারী ধনু নদ দিয়ে প্রতিদিন পাথর, বালু, কয়লা, সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই শত শত কার্গো, বাল্কহেড, যাত্রীবাহী লঞ্চ ও ট্রলার ছাড়াও নৌযান চলাচল করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নদটির বিভিন্ন স্থানে গত তিন-চার বছর ধরে নেত্রকোনার মোশাররফ হোসেন, রুবেল হোসেন, ঠাকুরাকোনা এলাকার ফেরদৌস, শেখ রাব্বী, খালিয়াজুরীর লিপসা এলাকার আব্দুল কদ্দুছ, জামালগঞ্জের আমানপুর গ্রামের আবারক মিয়া, ধর্মপাশা উপজেলার নজরপুর গ্রামের কামাল মিয়াসহ সাত-আট জন অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে নদ থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শেষ রাত পর্যন্ত বালু তুলে তা বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছে। প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করার ফলে নদের তীরবর্তী পাতরা গ্রামটি ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। নদ তীরবর্তী অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দারাও ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
পাতরা গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জু কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের গ্রামটি ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এখন অন্য গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে নদ তীরবর্তী মহব্বত নগর গ্রাম, মান্দারবাড়ি গ্রাম, গাগলাজুর বাজারসহ আশপাশের সব ফসলি জমিও বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
মান্দারবাড়ি গ্রামের একাধিক জেলে জানিয়েছেন, তাদের গ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত সাত-আটটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এর কারণে নদের তীরবর্তী পাতরা গ্রামটি বিলীন হয়ে গেছে। নদ থেকে এভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে মান্দারবাড়ি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলো ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাবে।’
ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা কামাল মিয়া বলেন, ‘আমরা বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করছি। পাশাপাশি বাসাবাড়ি নির্মাণের জন্যও এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছে বালু বিক্রি করে আসছি। তবে বালু উত্তোলন করতে স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা দিতে হয়। ওই চাঁদাবাজদের নাম বলতে চাই না। তাহলে বালু তোলা বন্ধ করে দেবে।’
মান্দারবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও গাগলাজুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বাদল মির্জা বলেন, ‘ধনু নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ এই নৌপথে চলা চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি। মাস দেড়েক আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।’
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে এখানে যোগদান করেছি। বিষয়টি ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন। আমি ওই এলাকার দ্বায়িত্বে থাকা আদর্শনগর পুলিশ ফাঁড়িকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তবে তারা কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা, তা জানা নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, ‘ধনু নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধের বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। যেহেতু বালুু তোলার কাজটি রাতে চলে সেক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নিয়ম নেই। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য ওসিকে বলেছি।’