নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সমাজ সহিলদেও ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামের বাসিন্দা হতদরিদ্র নাসিমা আক্তার। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন জরাজীর্ণ ঘরে। তাই সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় তিনি ঋণ করে এনে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে। কিন্তু টাকা দেওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ঘর পাননি।
ওই আওয়ামী লীগ কর্মীর কাছে টাকা চাইতে গেলে উল্টো তিনি নাসিমাকে হুমকি-ধমকি দেন। এ অবস্থায় অসহায় নাসিমা আক্তার স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা আওয়ামী লীগ কর্মী হলেন শাহীন আকন্দ (৪৮)। তিনি একই ইউনিয়নের কেওয়ারদিঘি গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে মোহনগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই জসিম উদ্দিন অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অভিযোগে নাসিমা আক্তার উল্লেখ করেন, সরকারি আশ্রয়ণের ঘর পাওয়ার আশায় তিন বছর আগে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী শাহীন আকন্দকে ২০ হাজার টাকা দেন। আওয়ামী লীগের লোক হওয়ায় তখন দ্রুত সময়ের মধ্যে নাসিমাকে ঘর পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন শাহীন। কিন্তু তিন বছর অতিবাহিত হলেও নাসিমার ভাগ্যে সরকারি ঘর আর জোটেনি। ঘর না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে নাসিমাকে উল্টো হুমকি-ধমকি দেন।
এদিকে এতদিন ভয়ে কিছু বলতে না পারলেও সরকার পতনের পর গত ৪ অক্টোবর টাকা ফেরত চাইতে গেলে ফের নাসিমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করলে তিনি গত ২৫ অক্টোবর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
নাসিমা আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ভাঙা ঘরে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে পোলাপান নিয়ে থাকি। শাহীনের সঙ্গে উপজেলার বড় বড় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তাই আমাকে ঘর পাইয়ে দেবে বলে অফিস খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে আমি ঋণ করে ২০ হাজার টাকা এনে তার হাতে দেই।
তিনি আরও বলেন, গত তিন বছরে ঋণের টাকার সুদ বেড়ে কয়েক গুণ হয়েছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এখনও ঘুরছি। কিন্তু আজও ঘর পেলাম না। পরে টাকা চাইলে ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। অভিযোগের পর তিন হাজার টাকা ফেরত দিলেও বাকি টাকা না দিয়ে টালবাহানা করছেন শাহীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগে শাহীনের কোনও পদ পদবী নেই। তবে সে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী।
তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে শাহীন আকন্দ দাবি করেন, অভিযোগটি মিথ্যা। এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ থানার এসআই জসিম উদ্দিন বলেন, নাসিমা আক্তারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন শাহীন। এর মধ্যে তিন হাজার টাকা ফেরতও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বাকি টাকা দিয়ে দেবেন বললেও দিচ্ছেন না। তবে দুই তিন দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।