X
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
১৩ বৈশাখ ১৪৩২

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভাঙা ভাস্কর্য সংস্কার করলেন শিল্পীরা

আতাউর রহমান জুয়েল, ময়মনসিংহ
০৮ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৩১আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৩১

ময়মনসিংহ নগরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। ভাস্কর্যটির নাক-মুখ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শোনার পর নগরে আনন্দ মিছিল বের হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে একদল দুর্বৃত্ত। ইতোমধ্যে নিজেদের উদ্যোগে এটি ভাস্কর্যটি সংস্কার করেছেন স্থানীয় শিল্পী ও ভক্তরা।

বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) সকালে ভাস্কর্যটিকে সংস্কার করতে দেখা গেছে শিল্পীদের। এটিকে সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্পী পর্ষদের সভাপতি মো. রাজন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শোনার পর ময়মনসিংহে সরকারি বিভিন্ন অফিস, বাসভবন, দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে অগ্নিসংযোগ করে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা। এই ভাঙচুর থেকে রক্ষা পায়নি জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যটিও। এই নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় শিল্প ও সংস্কৃতিমনা সচেতন মহলের মাঝে। দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তারা। 

জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা

ময়মনসিংহ নগরের কাঁচিঝুলি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালার সামনে জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি ২০১৫ সালে নির্মাণ করে তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভা। এটির এক পাশে সংগ্রহশালা, অন্য পাশে উদ্যান।

জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার উপকিপার মুকুল দত্ত বলেন, ‘গত সোমবার সন্ধ্যার আগমুহূর্তে একদল লোক অটোরিকশা দিয়ে এসে ভাস্কর্যটি ভাঙতে শুরু করে। তখন আনন্দ মিছিল থেকে ছড়িয়ে থাকা অনেক শিক্ষার্থীও এলাকাটিতে ছিল। সংগ্রহশালার কর্মী ও উপস্থিত কিছু শিক্ষার্থী বিক্ষুব্ধ লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, জয়নুল আবেদিন কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। এরপর ভাঙচুর বন্ধ করে তারা চলে যায়। এরপর ভাস্কর্যটি সংস্কারের জন্য কয়েকজন শিল্পী এসে দেখে গেছেন। এটি নির্মাণ করেছিল তৎকালীন পৌরসভা। তাই বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি সংস্কার করেছেন শিল্পীরা।’

বুধবার বিকালে সংগ্রহশালার সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভাস্কর্যটির নাক-মুখ ভাঙা। নিচে পড়ে আছে কিছু টুকরো। উদ্যানে আসা দর্শনার্থীরা ভাস্কর্যটির এমন অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

ময়মনসিংহ মহানগর সুজনের সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন বলেন, ‘ময়মনসিংহ নামের সঙ্গে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নাম চলে আসে। শিল্প-সংস্কৃতির এই শহরে শিল্পাচার্যের ভাস্কর্যটির যা করা হয়েছে, তার মোটেই কাম্য নয়। এ ধরনের অপতৎপরতা যারা করেছে, তাদের ভেতরে শিল্পবোধ নেই।’

বৃহস্পতিবার বিকালে সংগ্রহশালার সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভাস্কর্যটির ভাঙা নাক-মুখ সংস্কার করেছেন শিল্পীরা। সবকিছু ঠিক করে আগের অবস্থায় এটিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ময়মনসিংহের চিত্রশিল্পী জয়ন্ত কুমার শিবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাঙচুর করে শিল্পীসমাজের আবেগে আঘাত করেছে দুর্বৃত্তরা। আমরা ছোটবেলা থেকেই জয়নুলকে দেখে চিত্রশিল্পী হওয়ার পেশায় নিয়োজিত হয়েছি। তার ভাস্কর্য ভেঙে আমাদের মনে আঘাত করা হয়েছে।’ 

ক্ষোভ প্রকাশ করে চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক বলেন, ‘এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করা দরকার। ভাস্কর্যটি ভাঙার খবর শুনে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্পীসমাজের লোকজন ছুটে আসছেন। ইতোমধ্যে আমরা নিজেদের উদ্যোগে এটি সংস্কার করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছি। সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছি।’

বুধবার বিকালে সংগ্রহশালার সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভাস্কর্যটির নাক-মুখ ভাঙা। নিচে পড়ে আছে কিছু টুকরো

ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্পী পর্ষদের সভাপতি মো. রাজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের অস্থির সময়টাকে কাজে লাগিয়ে সুযোগ সন্ধানী দুষ্কৃতকারীরা ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করেছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে চেনে সারা বিশ্বের মানুষ। একইভাবে এটির মাধ্যমে ময়মনসিংহকে চেনে দেশের মানুষ। ভাস্কর্যটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। ভাঙচুর করে পুরো জাতিকে কলঙ্কিত করেছে তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই আমরা।’

প্রসঙ্গত, ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল আবেদিন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিভাবান এই শিল্পীকে ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের পথিকৃৎ বলে ধরে নেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। ১৯৭৫ সালে জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ে একটি লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে একটি গ্যালারি (শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা) প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুটি প্রতিষ্ঠানে তার অঙ্কিত কিছু চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ঢাকায় তার মৃত্যু হয়।

/এএম/
সম্পর্কিত
টোল প্লাজায় বিএনপি নেতার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ১৪ লাখ টাকা ছিনতাই, থানায় মামলা
মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সংস্কার হচ্ছে, ভাঙচুর নয়
যশোরে ১৪ বাড়িতে হামলা-লুটপাট, জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা
সর্বশেষ খবর
বেবিচক চেয়ারম্যান কসক্যাপ দক্ষিণ এশিয়ার সভাপতি নির্বাচিত
বেবিচক চেয়ারম্যান কসক্যাপ দক্ষিণ এশিয়ার সভাপতি নির্বাচিত
রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার ফল: আলী রীয়াজ 
রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার ফল: আলী রীয়াজ 
‘ভিভান’ সিনেমায় জুটি বাঁধছেন সিদ্ধার্থ-তামান্না
‘ভিভান’ সিনেমায় জুটি বাঁধছেন সিদ্ধার্থ-তামান্না
কবিতার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান বিবাদে মধ্যস্থতাকারী হওয়ার প্রস্তাব
কবিতার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান বিবাদে মধ্যস্থতাকারী হওয়ার প্রস্তাব
সর্বাধিক পঠিত
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কড়া কথা বললে অনেকের নাকি কষ্ট লাগে: মামুনুল হক
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কড়া কথা বললে অনেকের নাকি কষ্ট লাগে: মামুনুল হক
আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি
আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
মেলার প্যান্ডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
মেলার প্যান্ডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
ভারত কি পাকিস্তানে নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করতে পারবে?
ভারত কি পাকিস্তানে নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করতে পারবে?