মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনে বাদীসহ তিন জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানি হয়। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানি আগামীকাল সোমবার।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে উপস্থিত ছিল চার আসামি—শিশুটির বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি, বোনের স্বামী ও ভাশুর। গত ২৩ এপ্রিল এই চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলামসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তাকে সহযোগিতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গঠিত পাঁচ আইনজীবী প্যানেলের সদস্যরা। শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিনে বাদী ও প্রথম দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। আগামীকাল মামলার ৩, ৪ ও ৫ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যু) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশে (ভয়ভীতি প্রদর্শন) ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্ট) অভিযোগ গঠন করা হয়।
এদিকে আসামিদের আবেদনের ভিত্তিতে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সোহেল আহম্মেদ নামের এক আইনজীবীকে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিশুটির বোনের শ্বশুর ইতিপূর্বে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও আজ আদালতে সেসহ সব আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করায় লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে তাদের পক্ষে সোহেল আহমেদকে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে নিরাপত্তার কারণে তিনি আদালতে কোনও যুক্তিতর্কে অংশ নেননি।
সোহেল আহমেদ বলেন, ‘বাদীর দায়ের করা এজাহার ও পুলিশের অভিযোগপত্রের মধ্যে অমিল রয়েছে। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছিলেন ঘটনা ঘটেছে রাতে, আর অভিযোগপত্রে এসেছে ঘটনা ঘটেছে সকালে। এসব বিষয় নিয়ে সাক্ষীদের প্রশ্ন করা হবে।’
গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তিনি জানায়, ৬ মার্চ সকালে বোনের স্বামীর কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছিল।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ১ মার্চ শিশুটি নিজ বাড়ি থেকে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হেলিকপ্টারে মরদেহ মাগুরায় আনা হয়। জানাজার পর উত্তেজিত জনতা শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় চার জনকে আসামি করা হয়। বর্তমানে কারাগারে রয়েছে তারা সবাই।