বাগেরহাটের মোংলা শহরে কিশোরী (১৪) আত্মহননের ঘটনার ভিন্ন মোড় নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রচার পেলেও এখন জানা যাচ্ছে, বখাটে এক যুবক অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এই কিশোরীকে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন স্পষ্টে নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণ ও এর ভিডিও করে রাখে।
পরে ওই ভিডিওর ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। লজ্জা ও বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পেতে একপর্যায়ে আত্মহননে বাধ্য হয়।
এ ঘটনার প্রায় চার মাস পর নিহতের বাবা এক নারীসহ তিন জনকে অভিযুক্ত করে বাগেরহাট আদালতে গত ৭ এপ্রিল ধর্ষণ ও আত্মহননে প্ররোচনার দায়ে এজাহার দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২১ এপ্রিল মোংলা থানা পুলিশ এজাহারটিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণসহ আত্মহত্যার প্ররোচিত সংক্রান্ত ধারায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন।
এদিকে পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামি আসহাবুল ইয়ামিনকে (২৪) বিশেষ অভিযান চালিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধবী কলোনি এলাকা থেকে গত ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করে। গ্রেফতার যুবকের বাবা সোহেল রানা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি নৌযানে মাস্টার পদে কর্মরত রয়েছেন।
মামলা ও ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্র জানায়, ওই কিশোরী পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় বেশ পারদর্শী ছিল। অত্যন্ত চটপটে এই কিশোরীর ক্রিকেট খেলার সুবাদে মোংলার বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত ছিল। বিভিন্ন জায়গায় খেলার সূত্র ধরে আসহাবুল ইয়ামিন ও তার কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয়।
কিছু দিন পর আসহাবুল ও তার সহযোগীরা তাকে ফুসলিয়ে ট্রলারে করে সুন্দরবনের করমজল পিকনিক স্পষ্টে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে আসহাবুল তাকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের দৃশ্য ও নগ্ন ছবি ভিডিও নিয়ে রাখে। এরপর ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে।
ভিডিও-ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে তাকে। এভাবে দিনকে দিন অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে গত ১৪ ডিসেম্বর তাকে এক সহযোগীর মোটরসাইকেলে করে আসহাবুল কাইনমারী এলাকায় একটি কফি শপে ডেকে নেয়। সেখানে কথাবার্তার একপর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আসহাবুল তিরস্কার, লজ্জাজনক ও অপমানজনক নানা কথাবার্তা বলে। তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এতে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে আত্মহত্যা করে সে।
এদিকে এ ঘটনায় প্রথমে মোংলা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়। পরে নিহতের অভিভাবকরা বিভিন্ন মাধ্যমে এসব ঘটনা জানতে পেরে আসহাবুলসহ তার কয়েক সহযোগীর বিরুদ্ধে বাগেরহাট আদালতে গত ৭ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণসহ আত্মহত্যার প্ররোচিত সংক্রান্ত ধারায় এজাহার দাখিল করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার ওসি (তদন্ত) মানিক চন্দ্র গাইন জানান, ইতোমধ্যে মামলার তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে। ঘটনার অন্যতম হোতা আসহাবুল ইয়ামিনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আসহাবুল পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা ও তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা চলছে।