স্ত্রীকে ভারতে পাচারের পর হত্যার দায়ে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক গোলাম কবির এক রায়ে এই আদেশ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি আব্দুল লতিফ লতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাজাপ্রাপ্ত কামরুল ইসলাম যশোর সদর উপজেলার বানিয়ারগাতি গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। আর তার স্ত্রী সালমা খাতুন যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া মোল্লাপাড়ার শহিদুল ইসলামের মেয়ে।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে সালমার সঙ্গে কামরুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সালমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন তিনি। একপর্যায়ে পারিবারিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বলা হলে কামরুল তার স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে দুইজনে চাকরি করে সংসার চালাবেন বলে জানান। ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুরে সালমাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন কামরুল। এরপর থেকেই দুইজনের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়। চিন্তিত হয়ে সালমার পরিবার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। কিন্তু কোথাও তাদের সন্ধান পাননি।
২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল সালমা ভারত থেকে মোবাইল ফোনে পরিবারকে জানান, তাকে ঢাকায় না, ভারতের গুজরাট রাজ্যের আনন্দ জেলায় নিয়ে গেছেন কামরুল। একটি ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়েছে এবং সেখান থেকে তাকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ জানান। ওই বছরের ৬ মে ফের সালমা পরিবারের কাছে ফোন করে জানান, কামরুল তাকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই ব্যক্তি তার উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। একই দিন রাতে কামরুল তার শ্বশুর (সালমার বাবাকে) কল করে জানান, মেয়ের অবস্থা ভালো না। সে খুব বিপদে রয়েছে। শেষে জানান, সালমাকে ফেলে কামরুল দেশে চলে এসেছেন। দুই দিন পর ৮ মে সালমার বাবা শহিদুল ইসলাম তাদের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের বিষয়ে কামরুলকে জিজ্ঞাসা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কামরুল তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। একই সঙ্গে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে শহিদুল তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ভারতে খোঁজখবর নেন। কিন্তু সালমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
একপর্যায়ে শহিদুল ইসলাম কোতোয়ালি থানায় কামরুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার অপরাধ ও দমন আইনে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তকালে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামলাটি তদন্ত করেন এসআই অমিত কুমার দাস, তিনি ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন। তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে, ভারতে অবস্থানকালে সালমার সাথে দ্বন্দ্ব হয় কামরুলের। একপর্যায়ে পেঁয়াজ-রসুন বাটা হামান দিস্তার বাট দিয়ে সালমার মুখে আঘাত করেন তিনি। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সালমা। এরপর ওড়না দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। পরে ওই ঘরের মধ্যে মরদেহ রেখে তালা মেরে ও সালমার পাসপোর্ট নিয়ে দেশে চলে যান। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ও এ ঘটনায় গুজরাটের ভালেজ থানায় মামলা হয়।
মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণার দিনে আসামির উপস্থিতিতে বিচারক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।