খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেছেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী এখন অনশন করছে, তাদের কোনোভাবে মেজরিটি বলা যাবে না। এখানে অল্প কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে মেজরিটি সংখ্যক শিক্ষার্থী এসব আন্দোলন চায় না। আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। তারা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে চান। সুতরাং, আমি কী করে বুঝবো যে মেজরিটি শিক্ষার্থী এ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত? তাই, পদত্যাগে নয়, সমাধান আলোচনায়। সে পথটিই তৈরির কাজ চলছে। যেসব শিক্ষার্থী অনশন করছে, তাদের সঙ্গে শিক্ষকরা যোগাযোগ রাখছেন। তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে। আলোচনা করে সমাধান করা ছাড়া কোনও পথ নেই। আমরা সমাধানের জন্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। তাদের আলোচনায় আনতে প্রচেষ্টা চলছে।’
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকালে চলমান পরিস্থিতিতে বাংলা ট্রিবিউনকে এভাবেই নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানান কুয়েট উপাচার্য।
তিনি বলেন, ‘কুয়েটে দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস চলছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি সবই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেনে নেয়। চলমান আন্দোলন শুরুর পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষকরা গিয়েও বারবার তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। অনশনকারীরা কারও কথা শুনছে না।’
কুয়েটের ৩২ শিক্ষার্থী ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ২১ এপ্রিল বিকাল পৌনে ৪টায় স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে অনশন শুরু করে। এর আগে এক দফা দাবি পূরণে ২০ এপ্রিল তারা প্রেস ব্রিফিংয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের পর থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসি, প্রো-ভিসির অপসারণসহ ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ভিসির বাসভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় সার্বিক নিরাপত্তার কারণে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না মেনে হলে অবস্থান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঈদুল ফিতরের পর ১৩ এপ্রিল বেলা ৩টায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এরপর তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। বিকালে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়। তারা হলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য রাত ৮টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ তাদের সে দাবি মেনে না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাত্রিযাপন করেন। এ অবস্থায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ২ মে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত না মেনে শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন। এরপর এক দফা নিয়ে তারা ২১ এপ্রিল অনশন শুরু করেন।