যশোরের মণিরামপুরের কামিনীডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভেঙে টয়লেট নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও তার সহযোগী সুকুমার মল্লিকের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দ্বিতীয় আদালত) রাশেদুর রহমান জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ইকবাল হোসেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তারা হলেন- কুশারীকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ (৫৫) ও তার সহযোগী কামিনীডাঙ্গা গ্রামের সুকুমার মল্লিক (৬৫)।
জামিনের বিষয়টি জানিয়ে শিক্ষক আব্দুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিকালে আদালত আমাদের দুজনকে জামিন দিয়েছেন। বর্তমানে আমরা নিজ নিজ বাড়িতে আছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করা হয়েছিল আমাদের বিরুদ্ধে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সমন জারি করা হলেও তা গোপন রাখা হয়েছিল। বিষয়টি আমরা জানতাম না। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। সকালে আদালতে সোপর্দ করলে আমরা জামিন চাই।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কামিনীডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং কুশারীকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একই মাঠে পাশাপাশি অবস্থিত। একই মঠের এক কোণে ৩০ বছর আগে বালিকা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এই শহীদ মিনারে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা, স্বাধীনতা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে আসছেন। গত ১৫ জানুয়ারি কুশারীকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ শহীদ মিনারটি ভেঙে সেখানে টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগে নেন। এ ব্যাপারে বালিকা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাধা দিলেও শোনেননি। ফলে বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়।
এরপর বালিকা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষকসহ দুজনের বিরুদ্ধে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়। ইউএনও নিশাত তামান্নার নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু মোত্তালিব আলম সরেজমিনে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
এদিকে, বালিকা বিদ্যালয়ের পক্ষে সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান বাদী হয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও তার সহযোগী সুকুমার মল্লিককে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ ব্যাপারে মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওয়ারেন্ট পেয়ে মঙ্গলবার রাতে আব্দুর রশিদ ও তার সহযোগী সুকুমার মল্লিককে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার সকালে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল। বিকালে তাদের জামিন দিয়েছেন আদালত।’