যশোরে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ৩০ হাজারে ছয় ছয় লাখ টাকার বাড়ি দেবে বলে প্রতারণা শীর্ষক সংবাদে নড়েচড়ে বসেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিয়া নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যে তারা এই বিষয়ে জরুরি সভা ও স্থানীয় প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে তারা রফিকুল ইসলামের এই প্রতারণার বিষয়টি উল্লেখ করে সরল মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বানের পাশাপাশি প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন।
যশোর অঞ্চলে শিয়াদের নেতা ‘ইনকিলাব-এ মাহদী’ মিশনের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, ইতিমধ্যে তিনি ঝিকরগাছার উপজেলার বেজিয়াতলা, নগর প্রভৃতি এলাকার ২৯৩ জন (১০ হাজার করে টাকা) ও ৩০ জনের ৩০ হাজার করে টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। অপরদিকে, তার গ্রাম শার্শা উপজেলার স্বরূপদাহ এলাকার ৬০ জন এখনও কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন।
ইনকিলাব-এ মাহদী মিশনের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ১৯ নভেম্বর যশোরের শার্শা উপজেলার স্বরূপদাহ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের এমন প্রতারণার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যশোরে ৩০ হাজার টাকা জমা দিলেই একজন গ্রাহক প্রায় ছয় লাখ টাকা দামের তিন রুমের একটি পাকা বাড়ি পাবেন বলে প্রতারণা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ১০ হাজার টাকায় প্রতি মাসে প্রায় তিন হাজার টাকার খাদ্যসামগ্রী, এক লাখ টাকা জমা দিলে মাসে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে প্রতারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমাদের খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার দায়িত্বে থাকাদের প্রতিনিধিরা গত ১ ডিসেম্বর একটি জরুরি সভায় মিলিত হই। সেখানে সংবাদের বিষয়টি আলোচিত হয়। আমরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিয়া নেতৃবৃন্দ রফিকুল ইসলামের বক্তব্যে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমাদের আশঙ্কা, তার এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরলপ্রাণ মানুষের প্রতারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি জানান, খুলনার ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের অধ্যক্ষ ও মসজিদে ওয়ালি আসরের খতিব হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ ইব্রাহিম খলিল রাজাভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় রফিকুল ইসলামের অর্থনৈতিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এ ছাড়া সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনও শিয়া সংগঠন রফিকুল ইসলামের অপকর্মের সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন।
নেতৃবৃন্দ মনে করেন, প্রকাশিত সংবাদের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। যাতে গ্রামের সরলমনা সাধারণ মানুষ সংগঠন বহির্ভূত এবং ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত রফিকুল ইসলামের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেন প্রতারিত না হয়, ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জরুরি সভায় যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি/সম্পাদক বরাবর একটি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক শুক্রবার দুপুরে খুলনা, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোরসহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকার ২০ জন নেতার স্বাক্ষর সংবলিত একটি পত্র এবং সঙ্গে ইরানের কালচারাল সেন্টার পাঠানো চিঠির কপিও সংযুক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ নভেম্বর বাংলা ট্রিবিউনে রফিকুল ইসলামের প্রতারণার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যশোরে ৩০ হাজার টাকা জমা দিলেই একজন গ্রাহক প্রায় ছয় লাখ টাকা দামের তিন রুমের একটি পাকা বাড়ি পাবেন বলে প্রতারণা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ১০ হাজার টাকায় প্রতি মাসে প্রায় তিন হাজার টাকার খাদ্যসামগ্রী, এক লাখ টাকা জমা দিলে মাসে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে প্রতারণা করা হচ্ছে।
গত ২ ডিসেম্বর বাংলা ট্রিবিউনের কাছে পাঠানো ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়েদ রেজা মির মোহাম্মাদী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ইরানের কোনও সংস্থা কিংবা নাগরিকের সঙ্গে ওই রফিকুল ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। রফিকুল ইসলাম ইরানের ধনী শিয়া সম্প্রদায়ের সহায়তায় যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে দাবি করেছেন– সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য। তার কার্যক্রমের দায় শুধু তারই।’