সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ডিফেন্ডার মাছুরা পারভীন ও আফঈদা খন্দকারকে তার নিজ জেলা সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে জমকালো আয়োজনে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার যৌথ আয়োজনে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়কসহ তিন খেলোয়াড়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাফল্যের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সাতক্ষীরার সর্বস্তরের মানুষ সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে জড়ো হন। জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে এই তিন গর্বিত খেলোয়াড়কে দেওয়া হয় গণসংবর্ধনা। জেলা শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্যান্ড সংগীত, স্থানীয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও খেলোয়াড়দের নিয়ে স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে এক অন্য রকম অনুষ্ঠানে পরিণত হয় এই আয়োজন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান। এতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হাশেম, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বাসুদেব বসু, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ও ফুটবলার আফঈদা খন্দকারের বাবা খন্দকার আরিফ হাসান ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ মীর তাজুল ইসলাম রিপন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে এই তিন নারী ফুটবলারকে ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেস্ট এবং সংবর্ধনা স্মারক দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে প্রাইজমানি দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘এই তিন মেয়ে শুধু সাতক্ষীরার নয়, পুরো দেশের গর্ব। তাদের সাফল্য নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। এখানেই থেমে গেলে চলবে না। খেলার মান উন্নয়নে বিশেষ করে নারী ফুটবলের মান উন্নয়নে ইনডোর স্টেডিয়াম ও মহিলা স্টেডিয়াম নির্মাণের পাশাপাশি খেলাধুলায় নারীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। এই কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বক্তব্য রাখতে গিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, ‘শুধু ফুটবলে নয়, বিভিন্ন খেলায় সাতক্ষীরার ছেলেমেয়েরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় সাতক্ষীরা জেলা স্টেডিয়ামে বড় ধরনের কোনও টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। পরবর্তী প্রজন্মের সাবিনা, মাছুরা ও আফঈদাকে উঠিয়ে আনার কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা চাই আমাদের মতো সাতক্ষীরা থেকে আরও খেলোয়াড় উঠে আসুক, তারা দেশের জন্য ভূমিকা রাখুক। তাদের নিয়ে যেন আমরা গর্ব করতে পারি। তাদের সম্মানিত করতে পারি। আমি সাতক্ষীরা জেলার প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাবো, নারী ফুটবলের পাশাপাশি যেন অন্যান্য খেলাকে প্রাধান্য দিয়ে খেলোয়াড়দের সঠিক পরিচর্যা করা হয়।’
সাবিনা খাতুন আরও বলেন, ‘আমাদের সাফল্যের পেছনে পুরো জাতির দোয়া এবং পরিবারের সমর্থন ছিল। সাতক্ষীরার মানুষ সব সময় আমাদের পাশে থেকেছেন। আপনাদের এই ভালোবাসা আমাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখতে সাহস জোগায়। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। যাতে আগামীতে দেশের জন্য আরও বড় কোনও অর্জন বয়ে নিয়ে আসতে পারি আমরা।’
মাছুরা পারভীন বলেন, ‘সাতক্ষীরা এলে মনে হয়, সব মানুষ আমাদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। ছোট-বড় সবার ভালোবাসায় আমি, আমরা সিক্ত। স্থানীয়ভাবে খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে। খেলাধুলায় আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা উজ্জীবিত হবে। আরও নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরি হবে।’
আফঈদা খন্দকার বলেন, ‘আমার বাবা খেলোয়াড় ছিলেন। আমাকে তৈরি করার জন্য সকাল-বিকালে পরিশ্রম করেছেন। আমি তার কথা রাখতে পেরেছি। সাতক্ষীরাবাসী আমাদের নিয়ে গর্ব করেন। আমরা সাতক্ষীরা তথা বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে পেরে গর্বিত। আগামী দিনে যাতে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারি, সেজন্য সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সাফল্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন সাতক্ষীরার কৃতী খেলোয়াড় অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ডিফেন্ডার মাছুরা পারভীন ও আফঈদা খন্দকার। ২০২২ সালে নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে রচিত হয়েছিল এক নতুন গল্প। সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবিনা খাতুন। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মাসুরা খাতুন। তার সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে আফঈদা খন্দকার প্রান্তি। একই মাটিতে ২০২৪ সালে ৩০ অক্টোবর সেই গল্পের নতুন অধ্যায় লিখলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আর এ অবিস্মরণীয় সাফল্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে দেশকে গর্বিত করেছে এই নারী ফুটবল দল।