ঢাকা ব্রডকাস্টের উদ্যোগে ৮ নভেম্বর বিকাল ৩টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) খানজাহান আলী হল মাঠে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। এ অনুষ্ঠানে চলাকালে মাঠে ধূমপানের জন্য ৬টি বুথ খোলার অনুমতি চাওয়া হয়েছে আবেদনে। অবশ্য কর্তৃপক্ষ ধূমপানের জন্য সংগীতানুষ্ঠানে বুথ খোলার অনুমতি দিতে নারাজ।
ঢাকা ব্রডকাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুদান আল আমিন স্বাক্ষরিত একটি আবেদন গত ৩ অক্টোবর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিষদের প্রধান বরাবর জমা দেয়া হয়। ওই আবেদনে ৮টি দাবি উপস্থাপন করে জরুরিসেবায় এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১. সংগীতানুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি প্রদান।
২. কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থার আয়োজন (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক) করা।
৩. সংগীতানুষ্ঠানটি ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের সংগীতানুষ্ঠান প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৪. তামাকপণ্য, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ রোধে প্রবেশদ্বারে পর্যাপ্ত চেকিং করা।
৫. পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করা।
৬. সংগীতানুষ্ঠান প্রাঙ্গণে তামাকজাতীয় পণ্য বিক্রয় ও ধূমপানের জন্য অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্দিষ্ট ৬টি অস্থায়ী বুথ নির্মাণ, যাতে সেখানে ধূমপান ও দূষণ না হয়।
৭. মাঠ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান।
৮. সংগীতানুষ্ঠান প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কোনও অননুমোদিত বুথ, দোকান ও স্টল কিংবা অন্য কোনও কার্যক্রম স্থগিত রাখা।
এদিকে, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়ক সাইফুদ্দিন আহমেদ খুবি উপাচার্যের কাছে একটি আবেদনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা ব্রডকাস্টের ব্যান্ড সংগীতানুষ্ঠান আয়োজনের আড়ালে তামাকের প্রচারণা এবং ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করে অনুষ্ঠানস্থলটিকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
খুবি ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নাজমুস সাদাত শোভন এ চিঠি সম্পর্কে বলেন, ‘জনসম্মুখে ধূমপানের কোনও অনুমতির সুযোগ নেই। আর ধূমপানের জন্য আলাদা বুথ খোলার সুযোগও নেই।’
বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতায় ১৮(১) জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষত আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদকপানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯০-এর ধারা ৫(৩)-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নৈতিক শৃঙ্খলা, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করা, সহশিক্ষাক্রমিক কার্যাবলীর উন্নতিবর্ধন এবং স্বাস্থ্যের উৎকর্ষ সাধনের ব্যবস্থা করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
স্থানীয় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকার ৮.৫ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকপণ্যের দোকান নিষিদ্ধসংক্রান্ত বিধানে সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের আশপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য কোনও ট্রেড লাইসেন্স প্রদান না করা। তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে এর আওতা বৃদ্ধি করতে পারবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
আবেদনপত্রে ‘সই’ করা প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আবেদনপত্রটি প্রথমে পেয়ে অনুমোদন দিয়েছিলাম। পরে ৬ নম্বর পয়েন্টটি দৃষ্টিগোচর হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতেই ফোন করে পয়েন্টটি বাতিল করা হয়েছে। এ ধরনের কোনও কার্যক্রম চলার সুযোগ নেই।’