খুলনার খালিশপুর এলাকার আলোচিত জাহিদ হত্যা মামলায় পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন- আব্বাস আনসারী, নশু ফরাজী, রিয়াজ, নাদিম ও মো. জব্বার। রায় ঘোষণার সময় পাঁচ আসামিই কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায়ে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় আট বছর পর রায় ঘোষণা করা হলো। খুলনার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জুয়েল রানা সোমবার (২৮ অক্টোবর) এ রায় ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া একই আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার আরেক ভিকটিম নিহত জাহিদের বড় ভাই জাবেদকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা চেষ্টা ও আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধি ৩২৪ ও ৩০৭ ধারায় তিন ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে আলাদাভাবে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
মামলায় সাত জনকে খালাস দেওয়া হয়। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- ইব্রা আর আলাম আসিফ, রানা হোসেন, সুলতান ওরফে গব্বার, পাতলা সাগর, ওমর ফারুক ওরফে আরিফ, মেহেদী হাসান ওরফে প্যাকেট মেহেদী ও জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।
আদালতের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক শাহিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলা চলাকালে ২৬ জনের মধ্যে ১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। চার্জশিটভুক্ত ১২ জনের মধ্যে ৯ জন জেল হাজতে ও তিন জন পলাতক। রায় ঘোষণার সময় জেল হাজতে থাকা ৯ জনই কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। জেল হাজতে থাকা অপর চার ও পলাতক তিন জন মিলিয়ে সাত জন খালাস পেয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, খালিশপুর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেনের বড় ছেলে জাবেদের সঙ্গে এলাকার কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর সঙ্গে পূর্ব বিরোধ ছিল। ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি বাসা থেকে চিত্রালী বাজারের উদ্দেশে বের হন। পথিমধ্যে বঙ্গবাসী মোড়ে জনৈক জাহাঙ্গীরের চালের দোকানের সামনে পৌঁছালে আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর আক্রমণ করে। এ ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। আক্রমণের ঘটনা জানতে পেরে জাবেদের দুই ভাই সুমন ও জাহিদ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় এ মামলার আসামি আব্বাস আনছারি ও জব্বার জাবেদের ছোট ভাই সুমনকে ঝাপটে ধরে রাখে এবং সন্ত্রাসীরা তার মেজ ভাই জাহিদকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
পরে জাহিদ চিৎকার করলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানকার চিকিৎসক জাহিদকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরদিন নিহতের ছোট ভাই সুমন ১২ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় মামলা করেন। ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক বাবলু রহমান খান ১২ আসামির নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি আরিফ মাহমুদ লিটন, আসামিপক্ষে আব্দুল মালেক ও মহসিন মোহাম্মদ একরামুল হক খান মামলা পরিচালনা করেন।