যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন পদত্যাগ করেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুধবার (২১ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ইমেইলের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে পত্র পাঠিয়েছেন। উপাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অস্থিরতা ‘বিরাজ’ করছে বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় সেশনজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. ইকবাল কবির জাহিদসহ উপাচার্যের অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেন। দাবি আদায়ে যবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শেখ হাসিনার ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের বঙ্গবন্ধুর নাম ও বঙ্গবন্ধু একাডেমিকের গ্যালারির সামনে ছবি ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পর দিন কর্মসূচি থেকে ভিসির বাসা ও প্রশাসনিক ভবন তালা মেরে দেন। এ ছাড়া কুশপুত্তলিকা পোড়ান।
চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বিকালে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এ ছাড়া পদত্যাগপত্র জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ এবং উপাচার্যের একান্ত সচিব মো. আব্দুর রশিদও। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনিছুর রহমান, শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. তানভীর ইসলামসহ হলটির সব সহকারী প্রভোস্ট।
চলমান কর্মসূচির মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্যকে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দেয়। এরপর উপাচার্য আজ নিজের অব্যাহতি চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যে আন্দোলন করলো, সেটা সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। তাদের বলতে চাই, তারা ক্লাসরুমে ফিরে যাক। তারা জীবন গড়ুক। কারণ যেভাবে তারা আন্দোলন করছে, সেটা তো তাদের কাজ না। ট্রেজার, শিক্ষক, ভিসির বাসাতে যেয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগের দাবিতে মিছিল স্লোগান দেওয়া তাদের কাজ না। যে শিক্ষার্থীরা এত বড় গণঅভ্যুত্থান ঘটালো, সেই শিক্ষার্থীরা যা করছে সেটা শিক্ষক হিসাবে আমার কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ মিথ্যা। যদি কোনও দুর্নীতি করি, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে সরকার।’
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ২০ মে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) উপাচার্য পদে যোগদান করেন। চাকরির প্রথম মেয়াদে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ৫৫ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ২০২১ সালের ১৯ মে তার পদের মেয়াদ শেষ করেন। একই বছরের ১ জুন তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পান।