X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৬ বৈশাখ ১৪৩২

কয়লা-সার পানিতে মিশে সুন্দরবনের যেসব ক্ষতি হচ্ছে

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:০০আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:২০

কয়লা ও সারবাহী কার্গো জাহাজ নিয়মিত বিরতিতে মোংলা বন্দরের চ্যানেল ও সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে ডুবছে। এর ফলে এগুলো পানিতে মিশছে। এ কারণে নদ-নদীর প্রতিবেশ ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যর ঝুঁকি বাড়ছে। পশুর নদীর হারবাড়িয়ায় সর্বশেষ ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজের ৫০০ টন সার পানিতে মিশে গেছে। এর আগে একাধিকবার সার ও কয়লা নিয়ে কার্গো জাহাজ ডুবেছে। সার নদীতে মিশেছে, আর কয়লা দীর্ঘদিন পানির নিচে ছিল। এ সব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। নদ-নদীর প্রতিবেশ ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। এতে সুন্দরবনে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘সার ও কয়লা পরিবেশের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো পানিসহ প্রকৃতিক পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। জীববৈচিত্র্যের জন্যও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সার পানিতে মেশার ফলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।’

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্ভিদে পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ ঠেকাতে এই সার ব্যবহার করা হয়। এই সারে ৫০ ভাগ পটাসিয়াম থাকে। যা জলজ সম্পদের ক্ষতিসহ পাশের সুন্দরবনের পরিবেশও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।’

২৫ জানুয়ারি ডুবে যাওয়া শাহজালাল এক্সপ্রেস-২ জাহাজ

গত ২৫ জানুয়ারি রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ‘শাহজালাল এক্সপ্রেস-২’ জাহাজটি ডুবে যায়। এতে বিএডিসি আমদানি করা ৫০০ টন সার ছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাজটির মালিকপক্ষ এটি উদ্ধারে তৎপরতা চালায়। জাহাজটির মালিক আজাহার সিদ্দিক বলেন, ‘লাইটার জাহাজ এবং জাহাজে থাকা সার উদ্ধারে নির্ধারিত সময়ের ১১ দিন পর মোংলা ও খুলনার ডুবুরি দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুরুতে তারা জাহাজের সার অপসারণের চেষ্টা চালায়। তবে কোনও সার পাওয়া যায়নি। পুরো সারই নদীতে তলিয়ে গেছে।’

সার খালাসকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজের মালিক এস এম মোস্তাক মিঠু বলেন, ‘কানাডা থেকে এই সার আমদানি করছিল বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। তবে দুর্ঘটনার কারণে সার নিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি মোংলায় জাহাজটি ডুবে যায়।’

মোংলা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ‘৫০০ টন সার নিয়ে ২৫ জানুয়ারি জাহাজ‌টি যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়ে‌ছি‌ল। হারবাড়িয়া-৮ এলাকায় সুপ্রিম ভ্যালর নামের এক‌টি বিদেশি জাহাজকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে এটি। এ সময় ঘন কুয়াশায় জাহাজটি বিদেশি ওই জাহাজকে ধাক্কা দেয়। এতে জাহাজটির নিচের অংশ ক্ষ‌তিগ্রস্ত হলে ইঞ্জিন রুমে পানি ঢুকে যায়।’

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের শুরুতে কয়রার কাছে ফ্লাই অ্যাশসহ একটি কার্গো ডুবেছিল। ফ্লাই অ্যাশে কয়লার রাসায়নিক পদার্থের অধিকাংশই উপস্থিত থাকে। ২০১৫ সালের শুরুতে শরণখোলা এলাকায় এমওপি সার নিয়ে একটি কার্গো ডুবেছিল। এমওপি সার লাল রংয়ের। যা জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি। ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া ৩ থেকে ৫১০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মিনি কার্গো জিয়া মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের জয়মনিরঘোল এলাকার সাইলোর অদুরে ডুবে যায়। এ ঘটনায় বন কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বাদী হয়ে পরদিন কার্গো মালিক দিখ খান ওরফে হোসাইন খান ও মাস্টার ভুলু গাজীর নামে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ্য করা হয়। এরপর পুলিশ মাস্টার ভুলু গাজীকে গ্রেফতার করে এবং ২৯ অক্টোবর জেলহাজতে প্রেরণ করে। বনবিভাগের তদন্তে মাস্টার ও চালকের গাফিলতির কারণে কার্গো ডুবি হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়ছিল। 

২০১৪ সালে শ্যালা নদীতে ডুবে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায়

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর ‘হরিণটানা’ বন টহল ফাঁড়ির কাছে ১২৩৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ‘এমভি সি হর্স-১’ ডুবে যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে হিরণপয়েন্ট ফেয়ারবয়ার কাছে কয়লা বোঝাই এমভি আইচগাতি ডুবির ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায়ও মোংলা থানায় ২টি জিডি করা হয়। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মাদার ভ্যাসেল থেকে ছেড়ে আসার পথে হারবাড়িয়া ৫ ও ৬ নং বয়ার মধ্যবর্তী স্থানে ‘এমভি বিলাস’ নামে লাইটার ডুবো চরে আটকে কাত হয়ে ডুবে যায়। ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মোংলা বন্দরের পশুর নদীতে কয়লা বোঝাই কার্গো ডোবে। ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর পশুর নদীতে কয়লা নিয়ে ডুবে যায় ‘এমভি ফারদিন-১;। 

২০২২ সালের ৩ মার্চ ৬০০ টন কয়লাসহ ‘এমভি নাওমী’ পশুর নদীতে ডুবে যায়। দুই নিরাপত্তা কর্মীসহ জাহাজের ৮ নাবিক নিরাপদে তীরে উঠে আসেন। আর ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় সারবোঝাই জাহাজটি ডুবে যায়। জাহাজে নয় জন কর্মচারী ছিলেন। সবাইকে‌ জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে‌ কোস্টগার্ড প‌শ্চিম জোন।

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন নিষিদ্ধ করছে সরকার
সুন্দরবনের দস্যু করিম শরিফ বাহিনীর দুই সহযোগী অস্ত্রসহ আটক
সুন্দরবনে আবারও দস্যু আতঙ্কে জেলে-বনজীবীরা
সর্বশেষ খবর
চমেক শিক্ষার্থী আবিদ হত্যা মামলার ১২ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
চমেক শিক্ষার্থী আবিদ হত্যা মামলার ১২ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
পিএসসিকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতপিএসসিকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
অফিস আদেশে গায়েব ৩০ জনের নাম, ‘সুপারিশের ফল’ ভাবছেন ছাত্রদের একাংশ
জাবিতে জুলাই হামলাঅফিস আদেশে গায়েব ৩০ জনের নাম, ‘সুপারিশের ফল’ ভাবছেন ছাত্রদের একাংশ
ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে আইসক্রিম তৈরি করায় কারখানা মালিককে জরিমানা
ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে আইসক্রিম তৈরি করায় কারখানা মালিককে জরিমানা
সর্বাধিক পঠিত
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ১৪ বছরের বৈভব
দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ১৪ বছরের বৈভব
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকার লাইনে চলে একটি ট্রেন
৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকার লাইনে চলে একটি ট্রেন