X
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২

ঝিনাইদহে দুই দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮:৩৫আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৪২

করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে ফুল চাষে ধস নামলেও বর্তমানে বাজার জমে উঠেছে। প্রায় দুই বছর পর হাসি ফুটেছে ফুল চাষিদের মুখে। আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। একদিন পর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন ঝিনাইদহের ফুল চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও নানা অনুষ্ঠানে ফুলের বাড়তি চাহিদা থাকে। এই চাহিদার সিংহভাগ জোগান দেন কালীগঞ্জের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এবারও বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কালীগঞ্জের ফুলের সুবাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদন হয় কালীগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী এসএম টিপু সুলতান ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। তার বাগানে রয়েছে গোলাপ, জারবেরা ও চন্দ্রমল্লিকা। এরই মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি করেছেন টিপু সুলতান। সেই সঙ্গে লক্ষাধিক টাকার জারবেরা ও চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি করেছেন।

জারবেরা ফুলের বাগান

টিপু সুলতান জানান, ২৭ বছর ধরে ফুল চাষে জড়িত। ঢাকায় তার ফুলের দোকান আছে। সেখানে ফুল বিক্রি করেন। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসায়ীর কাছেও বাগানের ফুল বিক্রি করেন। তিনি শেরেবাংলা নগর ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক। সর্বপ্রথম গ্লাডিওলাস দিয়ে ফুল চাষ শুরু করেন। এরপর জারবেরা ফুলের আবাদ করেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের সুগন্ধি ফুল লিলিয়ামের চাষ করেন। কিন্তু সময় মতো ফুল না ফোটায় ওই বছর বেশি ফুল বিক্রি করতে পারেননি।

এসএম টিপু সুলতান বলেন, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে জারবেরা, দুই বিঘায় গোলাপ ও তিন বিঘায় চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্যান্য ফুল চাষ করেছি। এ বছর গোলাপ ফুলের বাজার খুব চড়া। একেকটি গোলাপ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। ফুলের বাগান দেখাশোনা করার জন্য রয়েছেন বেতনভুক্ত চার কর্মী। এছাড়া প্রতিদিন ১০-১৫ জন অস্থায়ী কর্মী বাগান পরিচর্যার কাজ করেন। বেতনভুক্তদের মাসে ১২-১৫ হাজার টাকা বেতন দিই। অস্থায়ীদের জনপ্রতি ২০০ টাকা হাজিরা দিই। বাগান পরিচর্যা, সেচ, সার, ওষুধ, পরিবহনসহ প্রতি বছরে ব্যয় হয় ২৪-২৫ লাখ টাকা। বছরে অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রি করি আমি। সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা আয় হয়।

ফুলের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত এক কর্মী

টিপু সুলতান আরও বলেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুলের ব্যবসা জমজমাট থাকে। এই সময় ফুলের দাম ভালো পাওয়া যায়। পাইকারিতে একটি লিলিয়াম ফুল ১০০ টাকা, জারবেরা ৫-১০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৬-৭ টাকা ও গোলাপ ১০ টাকা বিক্রি করি। তবে চাহিদা বুঝে দাম বাড়ানো হয়। বিশেষ করে দিবসগুলোতে ফুলের চাহিদা ও দাম বাড়ে। ফুল ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে পাইকারিতে ফুল কেনেন। এসব ফুল প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সাত লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে বলে আশা করছি।

কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ডুমুরতলা গ্রামের ফুল চাষি মিজানুর রহমান বলেন, পাঁচ কাঠা জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছি। এবার ফুলের দাম বেশি। এভাবে ফুল বিক্রি হলে আশা করছি গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।

একই এলাকার মোহাম্মদ আলী ও এমদাদুল হক দুই ভাই আট কাঠা, আব্দুল আলীম পাঁচ কাঠা জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছেন। তারা জানান, একেকটি ঝোপায় ৬০০-৭০০ গাঁদা ফুল থাকে। এক ঝোপা ফুল সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। এবার ফুলের দাম বাড়তি। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তারা।

দোকানে ফুল সাজিয়ে রাখছেন এক ব্যবসায়ী

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, জেলার প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়। তবে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ফুলের আবাদ কমেছে। চলতি বছর প্রায় ২১৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুলের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে জেলা সদরের গান্না, কোটচাঁদপুর উপজেলার ইকড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, মহেশপুর উপজেলার নেপা, শ্যামকুড় এলাকায় সবচেয়ে বেশি ফুলের আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত মোট ফুলের মধ্যে গাঁদা ফুল ৭০ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা ও জারবেরাসহ নানা জাতের ফুলের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয়েছে কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা এলাকায়। এ কারণে সবাই এখন এই এলাকাকে ফুলনগরী বলেন। এবার দুই দিবসে অন্তত দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি আমরা।

রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক চাষি উৎপাদিত ফুল নিয়ে ভ্যান ও ইঞ্জিনচালিত পরিবহনযোগে বাজারে আসছেন। বিকাল পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ফুলে ভরে যায়।

ফুল চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করেন। প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা ও অন্যান্য দিবসে ফুলের বাড়তি চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো। চাষিরা চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরের ফুলের আড়তে ফুল পাঠিয়ে দেন। ফলে টাকা খরচ করে ফুল বিক্রির জন্য কোথাও যাওয়া লাগে না চাষিদের। তারা মোবাইল ফোনে দাম ঠিকঠাক করে ফুল পাঠিয়ে দেন। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় ঝিনাইদহের ফুল

ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, জেলার মধ্যে কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর গ্রামে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়। এই এলাকার সফল ফুল চাষি টিপু সুলতান একাই ৮-১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেন। এলাকার চাষিদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ।

ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ছানা বলেন, আমার এলাকার মাটি খুবই উর্বর। এখানে লিলিয়াম, জারবেরা ও গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ হয়। ফুল চাষ করে এলাকার অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। বেকার সমস্যার সমাধান হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ফুল রফতানি হওয়ায় এলাকার সুনামও বাড়ছে। করোনার সংক্রমণ কমে গেলে ফুল চাষ আরও বাড়বে।

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
টমেটোর কেজি ২ টাকা, তবু ক্রেতা নেই
এক জাতের ফুলেই বছরে লাভ ১৮ লাখ টাকা
অনাবাদি জমি এখন ফসলে ভরপুর, রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টা চাষ
সর্বশেষ খবর
সাবেক উপমন্ত্রী জ্যাকবের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দুদকের
সাবেক উপমন্ত্রী জ্যাকবের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দুদকের
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দেখলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করুন: বিশেষ সহকারী মইনউদ্দীন
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দেখলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করুন: বিশেষ সহকারী মইনউদ্দীন
ঢাকায় হামজার অভিষেক, সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে এখনই চাপে বাফুফে
ঢাকায় হামজার অভিষেক, সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে এখনই চাপে বাফুফে
ইরানের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে তেহরান-বেইজিং আলোচনা
ইরানের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে তেহরান-বেইজিং আলোচনা
সর্বাধিক পঠিত
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো
প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে লাভ ১২ টাকা?
প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে লাভ ১২ টাকা?
পরিবারসহ বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক সাফিনুলের ৫৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পরিবারসহ বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক সাফিনুলের ৫৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
ক্যামেরায় ধরা পড়লো শিবির নেতা হত্যা মামলার আসামিকে গুলি ও কোপানোর দৃশ্য
ক্যামেরায় ধরা পড়লো শিবির নেতা হত্যা মামলার আসামিকে গুলি ও কোপানোর দৃশ্য
বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন আসিফ মাহমুদ
বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন আসিফ মাহমুদ