গাজীপুরের শ্রীপুরে নির্মাণাধীন একটি বাড়ির সানসেট ভেঙে চাপা পড়ে মো. রইস উদ্দিন (৩০) নামের এক নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরমী গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রইস উদ্দিন ওই ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের মো. সাইফুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় নির্মাণশ্রমিক। বরমী গ্রামের ফাইজুদ্দিনের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক ফাইজুদ্দিন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাতলাশী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শ্রীপুরের বরমী বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন।
নিহতের স্ত্রী রিমি আক্তার জানান, শনিবার সকালে নাশতা শেষে স্বামী কাজে বের হন। ঘণ্টাখানেক পর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে রাদিফাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, রইস উদ্দিন সানসেটের নিচে চাপা পড়ে আছেন। স্থানীয়দের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করা হয়।
রিমি আক্তার বলেন, ‘সকালে কাজে আসার সময় আমার মেয়ে রাদিফা বাবাকে বলেছিল আজ কাজে যেও না, আমার সঙ্গে খেলা করো। তারপরও শুনলো না। যদি বাড়িতে থাকতো হয়তো বেঁচে যেতো। এখন আমাদের কী হবে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’
নিহতের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ির মালিকের খামখেয়ালিপনার কারণে আমার ছেলেটাকে প্রাণ দিতে হলো। সানসেট ঢালাইয়ে পর্যাপ্ত রড ব্যবহার করা হয়নি বলে শুনেছি। যার কারণে আজকে আমার ছেলের ওপর সানসেট ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
প্রত্যক্ষদর্শী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যখন সানসেট ভেঙে পড়ে তখন বাড়ির মালিক ও নির্মাণকাজের ঠিকাদার ঘটনাস্থলে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান তারা। এ সময় স্থানীয় উত্তেজিত স্থানীয় লোকজন লাঠি, লোহার রড, হাতুড়ি নিয়ে নির্মাণাধীন বাড়িতে ভাঙচুর চালান। এ সময় অজ্ঞাত এক পথচারীর মাথায় জানালার গ্রিল পড়ে আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।’
নিহতের সহকর্মী নির্মাণশ্রমিক মোবারক হোসেন বলেন, ‘দোতলা বাড়ির প্রবেশ মুখেই সানসেটটি রড ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে। সকালে কাজ করার সময় হঠাৎ ভেঙে পড়ে রইস উদ্দিনের মৃত্যু হয়।’
নির্মাণকাজের ঠিকাদার ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি প্ল্যান মোতাবেক বাড়ির নির্মাণকাজ করছিলাম। বাড়িতে প্রবেশের মুখে মাথার ওপরে সানসেট নির্মাণের সময় পিলার দেওয়ার কথা জানানো হলেও বাড়ির মালিক শোনেননি। তার খামখেয়ালিপনার কারণে সানসেট ভেঙে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।’
বাড়ির মালিক ফাইজুদ্দিন বলেন, ‘আমি এখন চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আছি। বাড়িতে প্রবেশ মুখের সানসেট ভেঙে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এখানে আমার কোনও দোষ নেই।’
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুবর রহমান বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’