লিবিয়ায় মানব পাচারকারী হিসেবে পরিচিত রাকিব খানকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
পুলিশ বলছে, বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় রাকিবকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল অষ্টগ্রাম উপজেলার আব্দুল্লাহ পুর ইউনিয়নের সমন আলী ছেলে রাকিব খানকে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার কুমড়ি গ্রাম থেকে বানিয়াচং থানা পুলিশ আটক করে। ওই দিন রাতেই অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুর পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তা কাছের সোপর্দ করা হয়। ওই রাতেই রাকিবকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
একাধিক এলাকাবাসী জানান, রাকিব একজন চিহ্নিত মানব পাচারকারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিদেশে লোকজন পাঠিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলাও হয়েছিল।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, গত ৮ এপ্রিল রাতে বিথঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ি দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা রাকিবকে আটক করেন। পরে অষ্টগ্রাম থানা আওতায় হওয়ায় আব্দু্ল্লাহপুর পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্ব থাকা পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বুঝিয়ে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাকিব স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় আওয়ামী সরকারের আমল থেকেই বিদেশে মানবপাচার করে আসছেন। গত বছর দেড়েক আগে রাকিবের মাধ্যমে আব্দুল্লাহপুর মধ্যপাড়ার মৃত ফরিদ মিয়ার ছেলে শফিকুল মিয়াকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়া পাঠানো হয়। এর কয়েকমাস পরই রাকিব তার লোকজন দিয়ে শফিকুলকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর শফিকুলের মা বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করলে সম্প্রতি মোটা অংকের টাকা দিয়ে রফাদফা করেন রাকিব।
এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাকিব একজন আদম ব্যবসায়ী। বানিয়াচং উপজেলার কুমড়ি গ্রামে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় হাফেজ জালালের ছেলে ইমনের বিদেশ যাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। রাকিব বানিয়াচং গেলে তাকে তার আত্মীয় ও সেখানকার লোকজন আটক করে মারপিট করেন। সেখান থেকে রাকিবের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় পাওনা টাকা পরিশোধের শর্তে ফেরত দেওয়া হবে। পরে আববদুল্লাপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ এএসআই রাশেদুর রহমান ও হবিগঞ্জের বিতলংয়ের ইন্সপেক্টর রেজাউল হকের উপস্থিতিতে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু তাকে মারধর করা হয়েছে তাই পরিবারের জিম্মায় দেওয়ার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল। আর রাকিবের বিরুদ্ধে যেহেতু অষ্টগ্রাম থানায় কোনও মামলা, অভিযোগ বা জিডি নেই তাই তাকে পুলিশ গ্রেফতার দেখায়নি। পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।