শরীয়তপুরে চার সাংবাদিককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা। মানববন্ধনে থেকে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয় শরীয়তপুর প্রেসক্লাব, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামসহ অন্যান্য সংগঠনের সাংবাদিকরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন গণমাধ্যমের কর্মীরা।
এর আগে সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে সংবাদ প্রকাশের জেরে শরীয়তপুরে চার সাংবাদিককে হাতুড়িপেটার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতরা হলেন- দৈনিক সমকালের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজন, বেসরকারি টিভি নিউজ টোয়েন্টিফোর ও জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস এবং দেশ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আকাশ। ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, দৈনিক জনতা পত্রিকার শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি নুরুজ্জামান শেখ ও তার লোকজন এ হামলা করেছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় সোহাগ খান সুজনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় সোহাগ খান সুজন বাদী হয়ে সদরের পালং মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় নুরুজ্জামান শেখ, তার ভাই শামীম শেখ, সহযোগী ইব্রাহীম মোল্লা, তার ছেলে জিহাদ মোল্লা, মাকসুদা বেগম, মনির ঢালী, সালাউদ্দিন ঢালীকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে নুরুজ্জামান শেখ আত্মগোপনে আছেন। তার মোবাইল নম্বর থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মানববন্ধনে গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, গত মঙ্গলবার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। এ ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান শেখ ওই চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে সংবাদিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সোমবার নুরুজ্জামান শেখ, তার ভাই শামীম শেখসহ ৮-১০ জন মিলে ছুরি, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সোহাগ খান সুজনের ওপর হামলা চালান। তাকে বাঁচাতে এলে বিধান মজুমদার অনি, সাইফুল ইসলাম আকাশ ও নয়ন দাসের ওপর হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন তারা। পরে সোহাগ খানকে গুরুতর আহত অবস্থায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মানববন্ধনে শরীয়তপুর প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ও দৈনিক মানবজমিনের জেলা প্রতিনিধি খলিল শেখ বলেন, ‘সাংবাদিকরা সংবাদ প্রচার করার ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা যেই হামলা চালিয়েছে। এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। এটি গণমাধ্যমের জন্য হুমকি। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হোক।’
আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি নুরুল আমিন রবিন বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপরে যেভাবে হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে, সেটি পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনুন। না হয় আমরা এর থেকেও বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেবো।’
এটিকে ন্যক্কারজনক হামলা উল্লেখ করে প্রথম আলোর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপরে যেভাবে হামলাটি হয়েছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাংবাদিকদের ওপর এভাবে আক্রমণ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আমরা চাই না। আমাদের আহ্বান থাকবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রের কাছে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের নিরাপত্তার জায়গাটি তারা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক।’
এ ব্যাপারে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। অপরাধীদের গ্রেফতার করতে ইতোমধ্যে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করা হবে।’