সংবাদ প্রকাশের জেরে শরীয়তপুরে চার সাংবাদিককে হাতুড়িপেটার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন- দৈনিক সমকালের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজন, বেসরকারি টিভি নিউজ টোয়েন্টিফোর ও জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস এবং দেশ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আকাশ। ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, দৈনিক জনতা পত্রিকার শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি নুরুজ্জামান শেখ ও তার লোকজন এ হামলা করেছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় সোহাগ খান সুজনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার শিকার সাংবাদিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক নুরুজ্জামান শেখ শরীয়তপুর জেলা শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় একটি ক্লিনিকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গত ২৮ জানুয়ারি দুপুরে সদর হাসপাতালে এক রোগীর প্যাথলজি পরীক্ষা ও মৃত্যু এবং হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছুড়ে ফেলের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করা হয়, যা নিয়ে নুরুজ্জামানের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের বিরোধ দেখা দেয়।
এরপর ওই চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে দৈনিক জনতার জেলা প্রতিনিধি নুরুজ্জামান একটি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করেন। তা নিয়ে রবিবার দুপুরে নুরুজ্জামানের সঙ্গে সোহাগ খান সুজনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বাগবিতণ্ডা হয়। গতকাল রবিবার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে এ নিয়ে সালিশ বৈঠক হয়। সালিশের পর কয়েকজন সাংবাদিক নুরুজ্জামানকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সোমবার দুপুরে সুজন তার ব্যক্তিগত অফিসে যাচ্ছিলেন। পথে নুরুজ্জামান শেখের নেতৃত্বে ১০-১২ জন হাতুড়িসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে সুজনের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাকে রক্ষা করতে মজুমদার অনি, নয়ন দাস ও সাইফুল এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। তাদের হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অন্যরা চলে গেলেও সুজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, নুরুজ্জামান ও তার লোকজন সাংবাদিক সুজনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন। কয়েকজন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। সাংবাদিক মজুমদার এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে নুরুজ্জামান ও তার লোকজনকে ধাওয়া দেন।
সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বলেন, ‘নুরুজ্জামান শেখের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। সদর হাসপাতালর এক চিকিৎসককে নিয়ে নিউজ করার সূত্র ধরে নুরুজ্জামান নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রবিবার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আজ আমার ওপর হামলা করেছেন। হাতুড়ি দিয়ে আমার সারা শরীরে আঘাত করেছেন। ঘটনাটি আমি লিখিতভাবে পুলিশকে জানিয়েছি।’
হামলায় আহত বিধান মজুমদার বলেন, ‘হঠাৎ দেখি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নুরুজ্জামান শেখসহ ১০ থেকে ১২ জন সুজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাঁচাতে গেলে আমাদের ওপরও হামলা করেন তারা।’
এ বিষয়ে নুরুজ্জামান শেখ বলেন, এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কয়েকজন সাংবাদিক নিউজ করেছেন। তা নিয়ে ওই সাংবাদিকরা আমাকে ভুল বুঝেছেন। ওই ঘটনার জেরে রবিবার সুজনের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন মিলে আমাকে মারধর করেন। ওই ঘটনার জেরে আজ মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনাটি শুনে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি। এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেবো।’