গাজীপুরের কাপাসিয়ায় চাঁদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদ হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করার অপরাধে মালয়েশিয়াফেরত এনামুল হককে (৩৫) পিটিয়ে আহত করার তিন দিন পর তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার কাপাসিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাত ১২টার দিকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার (এনামুল হক) মৃত্যু হয়।
প্রবাসী এনামুল হক কাপাসিয়া উপজেলার তিলশুনিয়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ মালয়েশিয়াপ্রবাসী ছিলেন। ঘটনার তিন মাস আগে তিনি মালয়েশিয়া থেকে একেবারে দেশে চলে আসেন। তার ঘরে স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার এবং রিয়াদ হোসেন নামে তিন বছরের এক ছেলেসন্তান রয়েছে। ছোট থাকা অবস্থায় তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তিনি তার বোনের কাছে বড় হন। এনামুলের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ভাকোয়াদী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচন কমিশনের পূর্বনির্ধারিত স্মার্টকার্ড বিতরণ চলছিল। চাঁদপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদ হোসেন তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে যাচ্ছিলেন। ওই বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে চাঁদপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান মোড়লের ছেলে চাঁদপুর ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেক মোড়ল ও তার সহযোগী ইউনিয়ন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ২০-৩০ জন নেতাকর্মী তার ওপর হামলা করে গুরুতর আহত করে। এ সময় দৌড়ে ভাকোয়াদী কমিউনিটি ক্লিনিকের কাছে যাওয়ার সময় নিহত এনামুল হক ধলিসূতা তার বোনের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। ফরিদ হোসেনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে তাঁর মোবাইল ফোনে ভিডিও করছিলেন এনামুল। হামলার ঘটনা ভিডিও ধারণ করলে ফরিদ হোসেনের লোক মনে করে হামলাকারীরা তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে এনামুলের স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
নিহতের ভগ্নিপতি মানছুর আহমেদ বলেন, ‘বুধবার সকালে এনামুল শরীর খারাপ লাগার কথা জানিয়ে তাকে গাজীপুর গিয়ে চিকিৎসা দিতে বলে। এরপর এনামুল ওই দিন সকালে গাজীপুর শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ রোডে রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক দেখিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়িতে ফিরে যায়। ওই দিন সন্ধ্যার পর এনামুলের স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার ফোন করে জানায়, এনামুল অসুস্থ হয়ে বারবার খিঁচুনি দিচ্ছে। পরে স্বজনরা তাকে দ্রত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।’
অভিযুক্ত চাঁদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেক মোড়লের বাবা চাঁদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান মোড়ল বলেন, ‘এনআইডি স্মার্টকার্ড বিতরণকেন্দ্রে আমিসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে একটি সেবাকেন্দ্র খোলা হয়। ওই সেবাকেন্দ্র থেকে স্মার্টকার্ড নিতে আসা লোকদের সহযোগিতা করা হয়। চাঁদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদ হোসেনের বাড়ি ওই কেন্দ্রের (ভাকোয়াদী) পাশেই। তিনি তার দলীয় লোকজন নিয়ে এসে বলেন, তোদের এখানে কীসের সেবাকেন্দ্র। এ কথা বললে উৎসুক জনতা তাকে প্রতিহত করে। এ সময় তার লোকজনই তাকে মারধর করে আহত করে। এ ঘটনা এনামুল ভিডিও করলে ওই লোকজন তাকেও হামলা করে মারধর করে। তবে এনামুল দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। আমি বা আমাদের কোনও নেতাকর্মী তাকে চিনি না, মারধরের সঙ্গেও জড়িত নই।’
এ ব্যাপারে চাঁদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি ফরিদ হোসেনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চাঁদপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি ভিডিও ধারণ করার অপরাধে ছাত্রদলের লোকজন এনামুলকে মারধর করেছিল। তিন দিন পর গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।’
কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম তালুকদার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) নিহত এনামুলের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে এশার নামাজের পর তার নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।’