ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চিকিৎসকের বাড়ি থেকে কেয়ারটেকার ওহাব মাতুব্বরের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। ওই বাড়িতে চুরি করতে দেখে ফেলায় কেয়ারটেকারকে হত্যা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ভাঙ্গা উপজেলার আলেখারকান্দা গ্রামের মৃত রাজ্জাক কাজীর ছেলে আল আমিন কাজী (৪০), সদরপুর উপজেলার চর ব্রাক্ষন্দী গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম হাওলাদারের ছেলে অভি হাওলাদার (২৪) এবং একই উপজেলার হাজিরকান্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে আব্দুর রহমান (২০)। নিহত ওহাব মাতুব্বর (৭০) ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের তুজারপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে গত ৮ জানুয়ারি ভাঙ্গার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের আলেখারকান্দা গ্রামের এক চিকিৎসকের বাড়ি থেকে কেয়ারটেকার ওহাব মাতুব্বরের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়িটির মালিক ঢাকায় বসবাস করায় সেটি দেখাশোনা করতেন ওহাব। এ ঘটনায় ওহাবের বোন নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে মাঠে নামে পুলিশ।
পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, ‘সোমবার ওই গ্রামের আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে সদরপুর উপজেলা থেকে অভি হাওলাদার ও কোতোয়ালি এলাকা থেকে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, ওই বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিল। কেয়ারটেকার ওহাব দেখে তাদের চিনে ফেলায় হত্যা করেছে। গ্রেফতারদের মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
হত্যার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত ৩১ ডিসেম্বর ভোররাতে ওই বাড়িতে চুরি করতে যায় অভিযুক্ত তিন জন। তাদের দেখে চিনে ফেলায় বাড়ির দোতলায় কেয়ারটেকারকে হত্যা করা হয়।’
বাড়ির কোনও মালামাল খোয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ বিষয়ে বাড়ির মালিক মৃত চিকিৎসক জামাল উদ্দিনের মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদের। তিনি পুলিশকে জানান, বাড়িটিতে আসবাবপত্র এবং থালাবাসন ছাড়া তেমন কিছুই নেই। সেক্ষেত্রে কিছুই খোয়া যায়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মাদ ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ বিন কালাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) আসিফ ইকবাল ও ভাঙ্গা থানার ওসি মো. মোকছেদুর রহমান।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি সকালে ভাইকে দেখতে ভিজানো চিতই পিঠা নিয়ে ওই বাড়িতে যান বোন নুরজাহান বেগম। ডাকাডাকি করে না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন এবং ওই চিকিৎসকের স্ত্রী কামরুন্নাহার হেনাকে মোবাইলে ভাই কোথায় জিজ্ঞাসা করেন। কামরুন্নাহার স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামানকে ফোন করে তার বাড়িতে যেতে বলেন। মনিরুজ্জামান আরও কয়েকজনকে নিয়ে বাড়িতে যান। ডাকাডাকি করে ওহাবকে না পেয়ে বাড়ির দোতলার কক্ষের দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে দুর্গন্ধ দেখতে পান। একপর্যায়ে রশি দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।