মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় দীপাবলি ও কালীপূজা উপলক্ষে প্রায় আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার পর দুই দিনের মেলার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মেলার বিপক্ষের লোকজনসহ ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও মেলার পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির আপত্তির মুখে মেলার আয়োজন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন।
কালকিনি পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘ডিসি স্যারের মিটিংয়ে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই দিনের জন্য মেলা চলার অনুমতি স্যার দেবেন। তবে পৌরসভা থেকে যাকে ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেটি বাতিলই থাকছে। যারা কালীপূজার আয়োজন করেছে, মেলাটি তারাই পরিচালনা করবে। রবিবার জেলা প্রশাসন থেকে মেলাটি পরিচালনাসহ সার্বিক সব বিষয় লিখিত জানানো হবে।’
উপজেলা প্রশাসন, আয়োজক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি ও কালীপূজা। এই উৎসব ঘিরে কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ি মেলার আয়োজন করা হয়। প্রায় ২৫০ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার স্থানীয় ১২ জন ব্যক্তি ৯টি কারণ উপস্থাপন করে মেলাটি বন্ধের দাবি জানান। পরে কালকিনি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন সভা করে গত বৃহস্পতিবার মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ১ এপ্রিল পৌরসভার পক্ষ থেকে ৮০ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যে আকবর হোসেন সরদার নামের আওয়ামী লীগের এক নেতাকে মেলা আয়োজনের ইজারা দেওয়া হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে আওয়ামী লীগের নেতার ওই ইজারা বাতিলের দাবি জানায় একটি মহল। পরে সেটি করতে ব্যর্থ হলে তারা ৯টি কারণ দেখিয়ে মেলা পুরোপুরি বন্ধ করতে কালকিনি পৌরসভা ও প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়। পরে প্রশাসন অনেকটা চাপের মুখেই মেলাটি বন্ধের নির্দেশনা দেয়।
মেলা বন্ধের ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। পরে মেলাটি চালুর ব্যাপারে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তারের কাছে জানান। এরপর জেলা প্রশাসক নিজ কার্যালয়ে মেলার বিপক্ষের লোকজনসহ রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে জরুরি সভার আয়োজন করেন। সভায় কালীপূজার পাশাপাশি মেলাটি দুই দিনের জন্য পরিচালনা করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত নেওয়া হবে।
সভায় অংশ নেওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি আজিজুল হক মল্লিক বলেন, ‘পূজা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। মেলা নিয়ে আমাদের স্থানীয় নেতাকর্মীদের আপত্তি থাকায় তারা অভিযোগ দেন। বিষয়টি আমরা জানতাম। শনিবার জেলা প্রশাসক আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় আমরা মেলার বিপক্ষে ছিলাম। সভায় মন্দিরের লোকজন তিন দিনের পূজার কথা জানিয়েছেন। পূজার সঙ্গে মেলার সম্পর্ক নেই বলেও জানিয়েছেন। সবকিছু জেলা প্রশাসক নোট করেছেন। সব শুনে জেলা প্রশাসক যদি মেলার অনুমতি দেন, সেটা তার এখতিয়ারের মধ্যে দেবেন।’
সভায় অংশ নেওয়া জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির আব্দুস সোবহান বলেন, ‘সভায় প্রশাসন বাদে যারা ছিলেন, বেশিরভাগই মেলার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। জেলা প্রশাসককে উভয় পক্ষের কথা শুনে যেটা সুন্দর হয়, সেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি আমরা। মেলার সরাসরি বিপক্ষে আমরাও নই। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা বিষয় জড়িত। অনেকে অনেক আশা নিয়ে মেলার জন্য অপেক্ষা করেন। সবকিছু মিলিয়ে সুন্দর পরিবেশে যদি মেলাটি হয় তাহলে কারও কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
ভূরঘাটা কুন্ডুবাড়ি কালীপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল কুন্ডু বলেন, ‘কালীপূজা ঘিরেই মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের জিনিসপত্র ওঠে। হাজারো দোকানপাট বসে। লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। এটি দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মেলা। রাতের আঁধারে কিছু লোক ব্যানার টাঙিয়ে মেলা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে যায়। এটা দেখে আমরা অবাক হয়েছিলাম। তবে সর্বশেষ প্রশাসন মিটিংয়ে আশ্বাস দিয়েছে যে মেলা চলবে। তারা দুই দিন মেলা চলানোর অনুমতি দেবে।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘মেলা নিয়ে যারা আপত্তি জানিয়েছিলেন, তাদের নিয়ে সভা হয়েছে। সভায় দুই দিন মেলা চলবে সেটি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবিবার মেলার আয়োজকদের সঙ্গে সভা হবে। তারপর লিখিত অনুমতি দেওয়া হবে।’
