ফরিদপুরের বোয়ালমারীর পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর, তার তিন ছেলে ও ভাই সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে পাশের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া বাজার এলাকায় অবস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাইয়ের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বড় খারদিয়া গ্রামের সহস্রাধিক লোক এ হামলায় অংশ নেয়। হামলাকারীরা ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মান্নান মাতুব্বর, তার তিন ছেলে- হারেজ মাতুব্বর, মজ্নু মাতুব্বর ও মাসুদ মাতুব্বর এবং ভাই ইউপি আওয়ামী লীগ সদস্য সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটতরাজ করে। পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
এরপর হামলাকারীরা সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামের চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর সমর্থক হাসেম মোল্লা, কালাম মোল্লা, ইব্রাহিম মোল্লা, জালাল মোল্লা ও হবি মোল্লার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মানবতাবিরোধী অপরাধে সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বারখাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। (যদিও রায়ের পর থেকেই আবুল কালাম আজাদ পলাতক)। এ মামলার সাক্ষী ছিলেন পরমেশ্বরদী ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর। তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হয় বলে ধারণা আবুল কালামের অনুসারীদের।
এছাড়া বিগত দিনে ময়েনদিয়া বাজারে মান্নান চেয়ারম্যান একক রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তিনি ইতোপূর্বে একটি হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি ছিলেন। মূলত দীর্ঘদিনের এসব পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকেই বিক্ষুব্ধ জনতা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছেন বলে মনে করেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
তবে এ সময় মান্নান মাতুব্বর এবং পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। আশেপাশের লোকজন হামলার প্রতিরোধ করতে এলে বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করা হয় বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ছেলে জিহাদ মিয়ার নেতৃত্বে এ হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
তবে জিহাদ মিয়ার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান বলেন, ‘পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় কেউ আহত হয়েছে বলে জানা যায়নি। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থানায় কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি।’
নগরকান্দা-সালথা সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মান্নান মাতুব্বর আবুল কালাম আজাদের মামলার সাক্ষী ছিলেন বলে জেনেছি। তবে এ হামলার পেছনে ওই ঘটনা কাজ করেছে বলে মনে হয়নি। মেয়েনদিয়া বাজার এই এলাকার একটি বড় বাজার। এ বাজারের নিয়ন্ত্রণ এতোদিন ইউপি সদস্য মান্নান মাতুব্বর ও বড়খারদিয়া গ্রামের ইব্রাহিম মোল্লা ও তার ভাই জালাল মোল্লার হাতে ছিল। তা নিয়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে। ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর বেলা ১১টার দিকে বড় খারদিয়া গ্রামের ইব্রাহিম ও জালালের বাড়িতেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘ইব্রাহিম ও জালালের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সালথা ও বোয়ালমারীতে দ্রুত পুলিশের সম্মিলিত অভিযান শুরু হবে।’
এদিকে এই ঘটনা প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির হাসান চৌধুরী বলেন, ‘খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে জানাই। পরক্ষণেই ঘটনাস্থলে সেনাবাহীনির ৩টি টিম ও থানা থেকে পর্যাপ্ত ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। এখন পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও জানান, ‘বর্তমানে সেখানে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনও হতাহতের ঘটনা জানা যায়নি।’