কোটা আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকালে গাজীপুরের সফিপুর আনসার অ্যাকাডেমির সামনে গুলিতে গুরুতর আহত হন কলেজশিক্ষার্থী রায়হান মিয়া (২২)। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চতুর্থ তলায় বার্ন ইউনিটের ৪১৯ নম্বর (পুরুষ) ওয়ার্ডে ৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এক হাত থেতলানো ছাড়াও পুরো শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন রায়হান। গত ৬ আগস্ট তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন।
রায়হান গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনা করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাইহাট কলেজের ১৮ ব্যাচের এবং ক্রোড়গাছা বি এল উচ্চবিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
গাজীপুর আনসার অ্যাকাডেমির সামনে গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রায়হান। তারপরও ক্ষান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা, তাকে লাঠি ও পায়ের বুট দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে রায়হান মারা গেছে ভেবে তাকে পাশের সীমানাপ্রাচীরের ওপর দিয়ে বাইরের নালার মধ্যে ফেলে দেয়। পরে এলাকাবাসী তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা সেরে পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
রায়হানের সহপাঠী নাঈমা সুলতানা জানান, রায়হান অত্যন্ত ভদ্র ও দরিদ্র ঘরের সন্তান। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর (ছাপিপাড়া) গ্রামে তার বাড়ি। পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য রায়হান গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ইকো টেক্স নামের পোশাক কারখানায়ও চাকরি করেন।
রায়হানের মা রাশিদা বেগম জানান, রায়হানের বাবা রমজান আলী একজন দরিদ্র কৃষক। রায়হান চাকরির বেতন থেকে তার লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে মাস শেষে পরিবারের সহযোগিতার জন্য গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার কাছে টাকা পাঠাতো। চার ভাইবোনের মধ্যে রায়হান একমাত্র ছেলে। ছেলের চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত এক লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। তার এ চিকিৎসার পুরো টাকাটাই অন্যের কাছ থেকে ধার নেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে হাসপাতাল কিছু ওষুধ দিলেও অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের কলেজের স্নাতক (অনার্স) শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রায়হান খুবই মেধাবী। সে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর এলাকায় বসবাস করে একটি পোশাক কারখানায় খণ্ডকালীন চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।