X
শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪
১৪ আষাঢ় ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে সাভার-ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

নাদিম হোসেন, সাভার
২০ জুন ২০১৬, ০৮:৩৪আপডেট : ২০ জুন ২০১৬, ১২:৫১

মাটির তৈরি জিনিসপত্র

নগরায়নের ফলে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে সাভার ও ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বেঁচে থাকার তাগিদে চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার অনেক শিল্পী। একদিকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব অন্যদিকে আধুনিক যুগের যন্ত্রবিপ্লবের হুমকির মুখে পতন, এ দু’য়ের ফলে সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হয়ে চলেছে এর স্থায়ীত্ব ও বিকাশের পথ।

শতবর্ষী এ মৃৎশিল্পের তৈরি হাড়ি, পাতিল, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, ডাইনিং টেবিল, টালি, টাইলসসহ অনেক ধরনের নান্দনিক তৈজসপত্র দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকলেও ব্যবহার্য এসব বস্তু তৈরির প্রক্রিয়ায় কৌশলগত পরিবর্তনের ফলে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মৃৎ শিল্পীরা। কম চাহিদা, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি আর জীবন-মান উন্নয়নের জন্য ক্রমশ অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন তারা।

কাজ করছেন মৃৎ শিল্পী

সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে, আগে যেখানে সহস্রাধিক মৃৎশিল্পী ছিল আজ সেখানে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা কমে মাত্র অর্ধশতে দাঁড়িয়েছে। এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। এদের মধ্যে কেউ কেউ চলে গেছেন ভারতে। আবার কেউ বা জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের জন্য এ পেশা ছেড়ে হয়েছেন শিল্প কারখানার শ্রমিকসহ অন্যান্য যান্ত্রিক পেশাজীবী।

অবশ্য এমন এক সময় ছিল যখন মৃৎ পেশার সঙ্গে জড়িতদের জীবনমান ছিল উন্নত। আদি বা বংশানুক্রমে পাওয়া পেশা হওয়ায় অনেকে এ নিয়ে গর্ব করতেন। মাটির তৈরি তৈজসপত্রের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় এ পেশার মাধ্যমে স্বচ্ছলভাবেই জীবন ধারণ করতে পারতেন তারা। এমন অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুর মহল্লার মৃৎশিল্পী নীপেন চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছিল মাটির হাড়ি পাতিল তৈরি করা। তাদের বাড়ি এ এলাকায় কুমার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এমনকি এ মহল্লাকে আজও মানুষ পালপাড়া বলেই ডাকে। নৌকাযোগে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করতেন মাটির তৈরি তৈজসপত্র। একসময় এ জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল অনেক। কালের পরিক্রমায় আজ বলতে গেলে তা শূন্যের কোঠায়। চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশায় আজ টিকে থাকাই দায় হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হারিয়েই যাবে  এ পেশা।   

হারিয়ে যাচ্ছে সাভার-ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প  

ধামরাই পৌর শহরের পাল পাড়ার বাসিন্দা নিবাস পাল বলেন, পহেলা বৈশাখে মাটির খাবারের বাসন বানানোর চাহিদা বাড়ে। এসময় প্রতিবছরই ৫০০-৬০০ বাসন তিনি তৈরি করেন। এছাড়া সারা বছরে তেমন কোনও চাহিদা না থাকায় ওই সময়ে  ফুলের টব, শোপিস, খেলনা সামগ্রী, মাটির ব্যাংক ইত্যাদি তৈরি করতে হয়।

হারিয়ে যাচ্ছে সাভার-ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

সাভার ও ধামরাই এলাকার একাধিক মৃৎশিল্পী বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। দেশে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করে মাটির জিনিসপত্রের প্রয়োজনীয়তা জন সাধারণের কাছে তুলে ধরা করা দরকার।  তা না করা হলে মৃৎশিল্পীদের স্থান হবে শুধু ইতিহাসের পাতায়।

/এআর/এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: নাশকতার মামলায় গ্রেফতার কাউন্সিলর কারাগারে
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: নাশকতার মামলায় গ্রেফতার কাউন্সিলর কারাগারে
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ
নতুন করে কি ঘটতে পারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ?
নতুন করে কি ঘটতে পারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ?
চট্টগ্রামে দুই মার্কেটের আগুনে ৩ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রামে দুই মার্কেটের আগুনে ৩ জনের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
আলোচিত সেই ছাগল এখন কোথায়?
আলোচিত সেই ছাগল এখন কোথায়?
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ দুই সপ্তাহ পর প্রকাশ্যে
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ দুই সপ্তাহ পর প্রকাশ্যে
এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা ও তার স্বজনদের ৮৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা ও তার স্বজনদের ৮৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
কীসের ভিত্তিতে চারবার দুদকের ‘ক্লিন’ সার্টিফিকেট পান মতিউর?
কীসের ভিত্তিতে চারবার দুদকের ‘ক্লিন’ সার্টিফিকেট পান মতিউর?
যে কারণে ভারত-ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রিজার্ভ ডে নেই 
যে কারণে ভারত-ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রিজার্ভ ডে নেই