কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) লাকসাম উপজেলার আজগরা এবং মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ও নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে লাকসাম উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আজগরা স্কুল ও কলেজ মাঠে ওয়ার্ড কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে ওয়ার্ড সম্মেলনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিমের অনুসারীদের মধ্যে ভোটাভুটি নিয়ে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সংঘর্ষে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের ৬-৭ নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংঘর্ষের মাঝেই ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা হলেও আতঙ্ক বিরাজ করছে আজগরাজুড়ে।
এর একদিন আগে শুক্রবার লাকসাম পৌর এলাকায় ৭নং ওয়ার্ড গাজিমুড়া ও ১নং ওয়ার্ডে বিএনপির সম্মেলনেও কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। আহত হয় ৮-১০ নেতাকর্মী। সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিমের অনুসারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।
এ নিয়ে লাকসাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহ আলম বলেন, আজগরা স্কুল ও কলেজ মাঠে বিএনপির ওয়ার্ড সম্মেলন চলছিল। ঠিক তখন বাইরে প্রার্থীকে সমর্থন নিয়ে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও সামান্য হাতাহাতি হয়। পরে দায়িত্বশীলরা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এতে সম্মেলনে সমস্যা হয়নি।
এদিকে শনিবার সকালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনেও দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষে ৪ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। সংঘর্ষে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, শনিবার সকালে মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ইউনিয়নের বাইশগাঁও ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি নেতা সুলতান আহমেদ এবং হোসাইন মোহাম্মদ হেলাল। ভোটাভুটি ও সমর্থন নিয়ে সুলতান ও হেলালের অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দফায় দফায় সংঘর্ষে সুলতানের এককর্মী এবং হেলালে তিনকর্মী গুরুতর আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষে জড়িতরা কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিমের অনুসারী।
বাইশগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি সুমন পাটোয়ারী বলেন, কমিটি ঘোষণা শেষে হঠাৎ সুলতান ও হেলালের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে চার নেতাকর্মী আহত হন। নিজেদের মধ্যে এমন সংঘর্ষ, হানাহানি দুঃখজনক।
অন্যদিকে একই উপজেলার নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের কান্দি স্কুল মাঠে ২নং ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বিএনপির মনোনীত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন জানান, শনিবার সকালে নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের কান্দি স্কুল মাঠে ২নং ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে জেলার নেতৃবৃন্দ কমিটি ঘোষণা না করে কাউন্সিল অসমাপ্ত রেখেই স্থান ত্যাগ করেন।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা জানান, শুনেছি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।