গতবছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ভরপুর বর্ষার সময় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয় তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। এরপর থেকে ভাঙন আর থেমে থাকেনি। এবছর বর্ষা শুরুর দুই মাস আগেই ভাঙন দেখা দিয়েছে তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনার তীরের ফসলি জমি ও বসতভিটা বিলীন হচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে চর ইনদ্রুরিয়া গ্রামের আলতাফ মাস্টারঘাট থেকে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাকা রাস্তা, দুই শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ অর্ধ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরই বর্ষার সময় ভাঙন দেখা দেয়। ঘরবাড়ি ও জমি হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব জীবন কাটাচ্ছেন। নদীতে স্থায়ী বাঁধের দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছেন তারা। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে আবেদন করা হয়েছে। তারপরও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। নদীর স্রোত, অপরিকল্পিত ড্রেজিং এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন আরও বেড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও চরআবাবিল ইউনিয়ন নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের বিশাল বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের কিছু এলাকা এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে একটি সাইক্লোন শেল্টার, কয়েকটি কবরস্থান, মসজিদ, ঈদগাহ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম দিকে চর ইনদ্রুরিয়া, চরঘাসিয়া, জালিয়ারচর গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। এসব গ্রামের কয়েকটি পরিবার ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রায়পুর উপজেলার চর ইনদ্রুরিয়া ও জালিয়ারচরে মানুষ বেশি অবহেলিত মন্তব্য করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের পশ্চিমপাড় বিশাল এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নেই। এ কারণে প্রতিনিয়ত মেঘনার ভাঙনের শিকার হতে হয়। নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কৃষকে ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও ফসলি জমি।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার-ভূমি (উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের প্রশাসক) শাহেদ আরমান বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কাছ থেকে দেখেছি। বাঁধটি নির্মাণ হলে তারা নিজ ভূমিতে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
লক্ষ্মীপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, আমরা রায়পুরের মেঘনার ভাঙনস্থল পরিদর্শন করবো। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।