লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী জসিম উদ্দিন ব্যাপারী নিহতের ঘটনায় করা মামলার ১৪ আসামিকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃতরা বিএনপির নেতাকর্মী। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টনে একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর-সার্কেল) জামিলুল হক।
গ্রেফতাররা হলেন- রায়পুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইমাম হোসেন গাজী, উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন কৃষক দলের সদস্য আবুল খায়ের গাজী, ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মো. সিদ্দিক আলী দেওয়ান, ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি সোলায়মান দেওয়ান, উত্তর ওই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. হানিফ দেওয়ান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন বকসি, সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. শাহাদাত গাজী, বিএনপি কর্মী খালিদ গাজী, জাকির হোসেন, আব্দুল মন্নান গাজী, মো. নেসার উদ্দিন, মো. মিজান সরদার, মো. খিজির এবং তসলিম উদ্দিন। তারা উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের বাসিন্দা।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জসিম উদ্দিন হত্যা মামলার ১৪ আসামিকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ, স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফারুক কবিরাজ এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা কৃষক দলের সাবেক সদস্যসচিব শামীম গাজী। গত ৭ এপ্রিল বিকালে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা খাসেরহাট ও বাবুরহাটে সংঘর্ষে জড়ান। সংঘর্ষ চলাকালে আটটি বসতবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। এর মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মো. সাইজুদ্দিন দেওয়ান (৪৫) নামের এক স্পেনপ্রবাসীর মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় জসিম উদ্দিনসহ তিন জনকে। ১৪ এপ্রিল জসিমের মৃত্যু হয়েছে। নিহত দুজনের শরীরেই ধারালো অস্ত্রের জখম ছিল।
নিহত জসিম উদ্দিন (৩৮) উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী গ্রামের ফজলুল করিম ব্যাপারীর ছেলে। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী ছিলেন এবং ফারুক কবিরাজের অনুসারী ছিলেন। আর সাইজুদ্দিন ছিলেন শামীম গাজীর অনুসারী ও বিএনপির কর্মী।
সাইজুদ্দিন নিহতের ঘটনার তিন দিন পর নিহতের ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে ফারুক কবিরাজকে প্রধান আসামি করে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ফারুকের ছোট ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ এবং ১৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এই মামলায় তিন জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পাশাপাশি ১৬ এপ্রিল জসিমের বাবা বিএনপির ১২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজী মোস্তফা কামাল ও রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জি এম শামীমসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৮০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার ১৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।