স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) এ কথা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় অতি দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবো। পাহাড় অশান্ত তো আপনারা দেখেনই। ওই তুলনা করতে গেলে পাহাড় এখন পুরোটাই শান্ত। এই ছোটখাটো অপহরণ আমাদের প্লেইন ল্যান্ডেও (সমতল) তো হচ্ছে। খালি পাহাড়ের কেন দোষ দেন?’
আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন দফতর/সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি বান্দরবানের রেমাক্রিতে বৈসাবি উৎসবে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন দেখতে হবে আরাকান আর্মি ফাইট করতেছে অনেক দিন যাবৎ। এদের অনেকে এপারে বিয়ে করে ফেলছে—এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু যে হারে ভিডিওতে আসছে বিষয়টা তা নয়। টিকটক ভিডিও অনেকভাবে করা যায়। সবটা যে সত্য তা না, আবার সবটা যে মিথ্যা তা-ও না। এটার ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যালেন্স করতে হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি পাহাড়ে তিনবার চাকরি করেছি। ক্যাম্প কমান্ডার ছিলাম, সিও ছিলাম ও ব্রিগেড কমান্ডার ছিলাম। পাহাড় অশান্ত তো আপনারা দেখেনই। ওই তুলনা করতে গেলে পাহাড় এখন পুরোটাই শান্ত। এই ছোটখাটো অপহরণ আমাদের প্লেইন ল্যান্ডেও (সমতল) তো হচ্ছে। খালি পাহাড়ের কেন দোষ দেন? পাহাড় আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থায় আছে, অনেক শান্ত আছে। আমি বাঘাইহাটে ছিলাম। সেখানে ল্যান্ডমাইন দিয়ে একসঙ্গে পিকআপ উড়াই দিছে। তিন জন–চার জন করে মারা গেছে। সে সময় এই খবরগুলো আসেও নাই, প্লাস ওই এলাকায় অ্যাক্সেসেবিলিটিও ছিল না। কিন্তু এখন তো পাহাড়ের অবস্থা এত ভালো—ওই রাস্তা দিয়ে আপনারা সাজেক চলে যাচ্ছেন।’
সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে গুলি করে খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘পাহাড়, সমতল ও সমুদ্রের সংমিশ্রণে চট্টগ্রাম বিভাগ গঠিত। সে কারণে এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা অন্যান্য বিভাগ থেকে একটু কঠিন। বিশেষ করে ফটিকছড়ি, রাউজান, পটিয়া এবং সাতকানিয়া পাহাড় ও সমতলের সংমিশ্রণ থাকায় সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। সেজন্য তাদের আইনের আওতায় আনা সময়সাপেক্ষ। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় অতি দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।’
গণমাধ্যমের অকৃত্রিম সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনও ঘটনা ঘটলে তা অবশ্যই প্রকাশ করবেন। কিছু কিছু সাংবাদিক আছে যারা, কোনও ঘটনা ঘটলে যাচাই-বাছাই না করেই সংবাদ প্রচার করে। এর সুযোগ নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সাংবাদিকরা আমাদের দেশে বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়।’ এ সময় তিনি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানান।
বিভাগীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় কমিশনার ড. মো: জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন দফতর/সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।